পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
১১

সকলেই রেঙ্গুনে যাচ্চে। তাদের পরে এই জাহাজের লোকের ব্যবহারে কিছুমাত্র কঠোরতা নেই, তারা বেশ স্বচ্ছন্দে আছে। জাহাজের ভাণ্ডার থেকে তারা প্রত্যেকে একখানি করে’ ছবি আঁকা কাগজের পাখা পেয়ে ভারি খুসি হয়েছে।

 এরা অনেকেই হিন্দু, সুতরাং এদের পথের কষ্ট ঘোচান কারো সাধ্য নয়। কোন মতে আখ চিবিয়ে, চিঁড়ে খেয়ে এদের দিন যাচ্ছে। একটা জিনিষ ভারি চোখে লাগে, সে হচ্ছে এই যে, এরা মোটের উপর পরিস্কার—কিন্তু সেটা কেবল বিধানের গণ্ডির মধ্যে,—বিধানের বাইরে এদের নোংরা হবার কোনো বাধা নেই। আখ চিবিয়ে তার ছিব্‌ড়ে অতি সহজেই সমুদ্রে ফেলে দেওয়া যায়, কিন্তু সেটুকু কষ্ট নেওয়া এদের বিধানে নেই, যেখানে বসে খাচ্চে তার নেহাৎ কাছে ছিব্‌ড়ে ফেলছে; —এমনি করে’ চারিদিকে কত আবর্জ্জনা যে জমে উঠ্‌ছে তাতে এদের ভ্রক্ষেপ নেই। সব চেয়ে আমাকে পীড়া দেয় যখন দেখি থুথু ফেলা সম্বন্ধে এরা বিচার করে না। অথচ বিধান অনুসারে শুচিতা রক্ষা করবার বেলায় নিতান্ত সামান্য বিষয়েও এরা অসামান্য রকম কষ্ট স্বীকার করে।আচারকে শক্ত করে তুল্লে বিচারকে ঢিলে করতেই হয়। বাইরে থেকে মানুষকে বাঁধলে মানুষ আপনাকে আপনি বাঁধবার শক্তি হারায়।

 এদের মধ্যে কয়েকজন মুসলমান আছে; পরিষ্কার হওয়া সম্বন্ধে তারা যে বিশেষ সতর্ক তা নয়, কিন্তু পরিচ্ছন্নতা সম্বন্ধে তাদের ভারি সতর্কতা। ভাল কাপড়টি পরে’ টুপিটি বাগিয়ে