পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
জাপান-যাত্রী

বাতাসে যে-পরিমাণ বেগ থাক্‌লে তাকে মন্দ পবন বলে, অর্থাৎ যুবতীর মন্দ গমনের সঙ্গে কবিরা তুলনা করতে পারে,―এ তার চেয়ে বেশি; কিন্তু ঢেউগুলোকে নিয়ে রুদ্রতালের করতাল বাজাবার মত আসর জমেনি,—যেটুকু খোলের বোল দিচ্চে তাতে ঝড়ের গৌরচন্দ্রিকা বলেও মনে হয়নি। মনে করলুম মানুষের কুষ্ঠির মত, বাতাসের কুষ্ঠি গণনার সঙ্গে ঠিক মেলে না,—এ যাত্রা ঝড়ের ফাঁড়া কেটে গেল। তাই পাইলটের হাতে আমাদের ডাঙার চিঠিপত্র সমর্পণ করে’ দিয়ে প্রসন্ন সমুদ্রকে অভ্যর্থনা করবার জন্যে ডেক-চেয়ার টেনে নিয়ে পশ্চিমমুখো হয়ে বস্‌লুম।

 হোলির রাত্রে হিন্দুস্থানী দরোয়ানদের খচমচির মত বাতাসের লয়টা ক্রমেই দ্রুত হয়ে উঠ্ল। জলের উপর সূর্য্যাস্তের আলপনা-আঁকা আসনটি আচ্ছন্ন করে’ নীলাম্বরীর ঘোমটা-পরা সন্ধ্যা এসে বস্‌ল। আকাশে তখনও মেঘ নেই, আকাশসমুদ্রের ফেনার মতই ছায়াপথ জ্বল্‌জ্বল্‌ করতে লাগল।

 ডেকের উপর বিছানা করে’ যখন শুলুম, তখন বাতাসে এবং জলে বেশ একটা কবির লড়াই চল্‌চে,―একদিকে সোঁ সোঁ শব্দে তান লাগিয়েছে, আর একদিকে ছল্‌ ছল্‌ শব্দে জবাব দিচ্চে, কিন্তু ঝড়ের পালা বলে মনে হলনা। আকাশের তারাদের সঙ্গে চোখোচোখি করে’ কখন্‌ এক সময় চোখ বুজে এল।

 রাত্রে স্বপ্ন দেখ্‌লুম আমি যেন মৃত্যু সম্বন্ধে কোন একটি