পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
১৫

বেদমন্ত্র আবৃত্তি করে সেইটে কাকে বুঝিয়ে বল্‌চি। আশ্চর্য্য তার রচনা, যেন একটা বিপুল আর্ত্তস্বরের মত, অথচ তার মধ্যে মরণের একটা বিরাট বৈরাগ্য আছে। এই মন্ত্রের মাঝখানে জেগে উঠে দেখি আকাশ এবং জল তখন উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। সমুদ্র চামুণ্ডার মত ফেনার জিব মেলে প্রচণ্ড অট্টহাস্যে নৃত্য করচে।

 আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘগুলো মরিয়া হয়ে উঠেচে, যেন তাদের কাণ্ডজ্ঞান নেই,―বল্‌চে, যা’ থাকে কপালে। আর জলে যে বিষম গর্জ্জন উঠ্‌ছে, তাতে মনের ভাবনাও যেন শোনা যায় না, এমনি বোধ হতে লাগ্‌ল। মাল্লারা ছোট ছোট লণ্ঠন হাতে ব্যস্ত হয়ে এদিকে ওদিকে চলাচল করচে,— কিন্তু নিঃশব্দে। মাঝে মাঝে এঞ্জিনের প্রতি কর্ণধারের সঙ্কেত-ঘণ্টাধবনি শোনা যাচ্চে।

 এবার বিছানায় শুয়ে ঘুমাবার চেষ্টা করলুম। কিন্তু বাইরে জলবাতাসের গর্জ্জন, আর আমার মনের মধ্যে সেই স্বপ্নলব্ধ মরণমন্ত্র ক্রমাগত বাজ্‌তে লাগল। আমার ঘুমের সঙ্গে জাগরণ ঠিক যেন ঐ ঝড় এবং ঢেউয়ের মতই এলোমেলো মাতামাতি করতে থাক্‌ল,—ঘুমচ্চি কি জেগে আছি বুঝতে পারচি নে।

 রাগী মানুষ কথা কইতে না পারলে যেমন ফুলে ফুলে ওঠে, সকাল-বেলাকার মেঘগুলোকে তেমনি বোধ হল। বাতাস কেবলই শ ষ স, এবং জল কেবলি বাকি অন্ত্যস্থ বর্ণ য র ল ব হ নিয়ে চণ্ডীপাঠ বাধিয়ে দিলে, আর মেঘগুলো জটা দুলিয়ে