পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
জাপানযাত্রী

অনেকবার মনে হল। চারিদিকেই ত মৃত্যু, দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্য্যন্ত মৃত্যু—আমার প্রাণ এর মধ্যে এতটুকু। এই অতি ছোটটার উপরেই কি সমস্ত আস্থা রাখব, আর এই এত সড়টাকে কিছু বিশ্বাস করব না?―বড়র উপরে ভরসা রাখাই ভাল।

 ডেকে বসে থাকা আর চল্‌চে না। নীচে নাবতে গিয়ে দেখি সিঁড়ি পর্য্যন্ত জুড়ে সমস্ত রাস্তা ঠেসে ভর্ত্তি করে ডেক্‌-প্যাসেঞ্জার বসে। বহু কষ্টে তাদের ভিতর দিয়ে পথ করে ক্যাবিনের মধ্যে গিয়ে শুয়ে পড়লুম। এইবার সমস্ত শরীর মন ঘুলিয়ে উঠ্‌ল। মনে হল দেহের সঙ্গে প্রাণের আর বন্‌তি হচ্চে না; দুধ মথন করলে মাখনটা যে রকম ছিন্ন হয়ে আসে প্রাণটা যেন তেমনি হয়ে এসেছে। জাহাজের উপরকার দোলা সহ্য করা যায়, জাহাজের ভিতরকার দোলা সহ্য করা শক্ত। কাঁকরের উপর দিয়ে চলা, আর জুতার ভিতরে কাঁকর নিয়ে চলার যে তফাৎ, এ যেন তেমনি। একটাতে মার আছে বন্ধন নেই, আর একটাতে বেঁধে মার।

 ক্যাবিনে শুয়ে শুয়ে শুন্‌তে পেলুম ডেকের উপর কি যেন হুড়মুড় করে ভেঙে ভেঙে পড়চে। ক্যাবিনের মধ্যে হাওয়া আসবার জন্যে যে ফানেলগুলো ডেকের উপর হাঁ করে নিশ্বাস নেয়, ঢাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে,― কিন্তু ঢেউয়ের প্রবল চোটে তার ভিতর দিয়েও ঝলকে ঝলকে ক্যাবিনের মধ্যে জল এসে পড়চে। বাইরে উনপঞ্চাশ বায়ুর