পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
জাপান-যাত্রী

ঝড়ের পালার মধ্যে সব চেয়ে স্পষ্ট করে’ আমার মনে পড়ছে জাপানী মাল্লাদের হাসি।

 শনিবার দিনে আকাশ প্রসন্ন কিন্তু সমুদ্রের আক্ষেপ এখনাে ঘােচে নি। আশ্চর্য্য এই, ঝড়ের সময় জাহাজ এমন দোলে নি, ঝড়ের পর যেমন তার দোলা। কালকেকার উৎপাতকে কিছুতেই যেন সে ক্ষমা করতে পারচে না, ক্রমাগতই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে। শরীরের অবস্থাটাও অনেকটা সেই রকম,—ঝড়ের সময় সে একরকম শক্ত ছিল, কিন্তু পরের দিন ভুল্‌তে পার্‌চে না তার উপর দিয়ে ঝড় গিয়েছে।

 আজ রবিবার। জলের রং ফিকে হয়ে উঠেছে। এতদিন পরে আকাশে একটি পাখী দেখ্‌তে পেলুম— এই পাখীগুলিই পৃথিবীর বাণী আকাশে বহন করে নিয়ে যায়— আকাশ দেয় তার আলাে, পৃথিবী দেয় তার গান। সমুদ্রের যা’-কিছু গান সে কেবল তার নিজের ঢেউয়ের—তার কোলে জীব আছে যথেষ্ট, পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি, কিন্তু তাদের কারাে কণ্ঠে সুর নেই—সেই অসংখ্য বােবা জীবের হয়ে সমুদ্র নিজেই কথা কচ্চে। ডাঙার জীবেরা প্রধানত শব্দের দ্বারাই মনের ভাব প্রকাশ করে, জলচরদের ভাষা হচ্চে গতি। সমুদ্র হচ্চে নৃত্যলােক, আর পৃথিবী হচ্চে শব্দলােক।

 আজ বিকেলে চারটে পাঁচটার সময় রেঙ্গুনে পৌঁছবার কথা। মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্য্যন্ত পৃথিবীতে নানা খবর চলাচল করছিল, আমাদের জন্যে সেগুলো সমস্ত জমে রয়েছে;—