পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
২৭

সূর্য্যাস্তের আকাশের মত বিচিত্র হয়ে উঠেচে। কেনাবেচার কোন নিষেধ নেই, মুসলমান দোকানদারেরা বিলাতি মণিহারির দোকান খুলে বসে গেছে। মাছ মাংসেরও বিচার নেই, চারিদিকে খাওয়া দাওয়া ঘরকন্না চল্‌চে। সংসারের সঙ্গে মন্দিরের সঙ্গে ভেদমাত্র নেই—একেবারে মাখামাখি। কেবল, হাটবাজারে যেরকম গোলমাল, এখানে তা’ দেখা গেল না। চারিদিক নিরালা নয়, অথচ নিভৃত; স্তব্ধ নয়, শান্ত। আমাদের সঙ্গে ব্রহ্মদেশীয় একজন ব্যারিষ্টার ছিলেন, এই মন্দির সোপানে মাছ-মাংস কেনাবেচা এবং খাওয়া চল্‌চে, এর কারণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বল্লেন, বুদ্ধ আমাদের উপদেশ দিয়েচেন—তিনি বলে’ দিয়েচেন কিসে মানুষের কল্যাণ, কিসে তার বন্ধন; তিনি ত জোর করে কারো ভালো করতে চান নি; বাহিরের শাসনে কল্যাণ নেই, অন্তরের ইচ্ছাতেই মুক্তি; এই জন্যে আমাদের সমাজে বা মন্দিরে আচার সম্বন্ধে জবরদস্তি নেই।

 সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেখানে গেলুম সেখানে খোলা জায়গা, তারই নানাস্থানে নানারকমের মন্দির। সে মন্দিরে গাম্ভীর্য্য নেই, কারুকার্য্যের ঠেলাঠেসি ভিড়—সমস্ত যেন ছেলেমানুষের খেলনার মত। এমন অদ্ভুত পাঁচমিশালি ব্যাপার আর কোথাও দেখা যায় না—এ যেন ছেলে-ভুলোনো ছড়ার মত; তার ছন্দটা একটানা বটে, কিন্তু তার মধ্যে যা’-খুশি-তাই এসে পড়েচে, ভাবে পরস্পর-সামঞ্জস্যের কোনো দরকার নেই। বহুকালের পুরাতন শিল্পের সঙ্গে এখানকার নিতান্ত সস্তাদরের তুচ্ছতা