পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
জাপান-যাত্রী

দ্বীপগুলোর নাম জানিনে; ইস্কুলের ম্যাপে ও-গুলোকে মুখস্থ করতে হয় নি; দূর থেকে দেখে মনে হয় ওরা একেবারে তাজা রয়েছে, সার্কূলেটিং লাইব্রেরির বইগুলোর মত মানুষের হাতে হাতে ফিরে নানা চিহ্ণে চিহ্ণিত হয়ে যায় নি; সেই জন্যে মনকে টানে। অন্যের পরে মানুষের বড় ঈর্ষা। যাকে আর কেউ পায় নি, মানুষ তাকে পেতে চায়। তাতে যে পাওয়ার পরিমাণ বাড়ে তা নয়, কিন্তু পাওয়ার অভিমান বাড়ে।

 সূর্য্য যখন অস্ত যাচ্ছে, তখন পিনাঙের বন্দরে জাহাজ এসে পৌঁছল। মনে হল বড় সুন্দর এই পৃথিবী। জলের সঙ্গে স্থলের যেন প্রেমের মিলন দেখ্‌লুম। ধরণী তার দুই বাহু মেলে সমুদ্রকে আলিঙ্গন করচে। মেঘের ভিতর দিয়ে নীলাভ পাহাড়গুলির উপরে যে একটি সুকোমল আলো পড়চে সে যেন অতি সূক্ষ্ম সোনালি রঙের ওড়নার মত—তাতে বধূর মুখ ঢেকেচে, না প্রকাশ করচে, তা’ বলা যায় না। জলে স্থলে আকাশে মিলে এখানে সন্ধ্যাবেলাকার স্বর্ণতোরণের থেকে স্বর্গীয় নহবৎ বাজতে লাগল।

 পালতোলা সমুদ্রের নৌকাগুলির মত মানুষের সুন্দর সৃষ্টি অতি অল্পই আছে। যেখানে প্রকৃতির ছন্দেলয়ে মানুষকে চল্‌তে হয়েছে, সেখানে মানুষের সৃষ্টি সুন্দর না হয়ে থাক্‌তে পারে না। নৌকাকে জল বাতাসের সঙ্গে সন্ধি করতে হয়েছে, এই জন্যেই জল বাতাসের শ্রীটুকু সে পেয়েচে। কল যেখানে নিজের জোরে প্রকৃতিকে উপেক্ষা করতে পারে, সেইখানেই