পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
জাপান যাত্রী

 এই জন্যেই প্রতিদিন আমরা বুঝতে পারচি, জগতে সূর্য্যোদয় ও সূর্য্যাস্ত সামান্য ব্যাপার নয়, তার অভ্যর্থনার জন্যে স্বর্গ মর্ত্ত্যে রাজকীয় সমারোহ। প্রভাতে পৃথিবী তার ঘোম্‌টা খুলে দাঁড়ায়, তার বাণী নানা সুরে জেগে উঠে; সন্ধ্যায় স্বর্গলোকের যবনিকা উঠে যায়, এবং দ্যুলোক আপন জ্যোতি-রোমাঞ্চিত নিঃশব্দতার দ্বারা পৃথিবীর সম্ভাষণের উত্তর দেয়। স্বর্গমর্ত্ত্যের এই মুখোমুখি আলাপ যে কত গম্ভীর এবং কত মহীয়ান, এই আকাশ ও সমুদ্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তা’ আমরা বুঝতে পারি।

 দিগন্ত থেকে দেখতে পাই মেঘগুলো নানা ভঙ্গীতে আকাশে উঠে চলেচে, যেন সৃষ্টিকর্ত্তার আঙিনার আকার-ফোয়ারার মুখ খুলে গেচে। বস্তু প্রায় কিছুই নেই, কেবল আকৃতি, কোনটার সঙ্গে কোনটার মিল নেই। নানা রকমের আকার;—কেবল সোজা লাইন নেই। সোজা লাইনটা মানুষের হাতের কাজের। তার ঘরের দেওয়ালে, তার কারখানা-ঘরের চিম্‌নিতে মানুষের জয়স্তম্ভ একেবারে সোজা খাড়া। বাঁকা রেখা জীবনের রেখা, মানুষ সহজে তাকে আয়ত্ত করতে পারে না। সোজা রেখা জড় রেখা, সে সহজেই মানুষের শাসন মানে; সে মানুষের বোঝা বয়, মানুষের অত্যাচার সয়।

 যেমন আকৃতির হরির লুঠ, তেমনি রঙের। রং যে কত রকম হতে পারে, তার সীমা নেই। রঙের তান উঠ্‌চে, তানের উপর তান; তাদের মিলও যেমন, তাদের অমিলও তেমনি। তারা বিরুদ্ধ নয়, অথচ বিচিত্র। রঙের সমারোহেও যেমন