বাজচে, অসীমের সাধনা এই সুন্দরীকে নূতন নূতন মালায় নূতন করে সাজাচ্চে। ঐ কালো এই রূপসীকে এক মুহুর্ত্ত বুকের থেকে নামিয়ে রাখ্তে পারেন না,― কেননা এ যে তাঁর পরমা সম্পদ। ছোটর জন্যে বড়র এই সাধনা যে কি অসীম, তা ফুলের পাপড়িতে পাপড়িতে, পাখীর পাখায় পাখায়, মেঘের রঙে রঙে, মানুষের হৃদয়ের অপরূপ লাবণ্যে মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে ধরা পড়চে। রেখায় রেখায়, রঙে রঙে, রসে রসে তৃপ্তির আর শেষ নেই। এই আনন্দ কিসের?—অব্যক্ত যে ব্যক্তর মধ্যে কেবলই আপনাকে প্রকাশ কর্চেন, আপনাকে ত্যাগ করে করে ফিরে পাচ্চেন।
এই অব্যক্ত কেবলি যদি না-মাত্র, শূন্যমাত্র হতেন, তাহলে প্রকাশের কোনো অর্থই থাকত না, তাহলে বিজ্ঞানের অভিব্যক্তি কেবল একটা শব্দমাত্র হত। ব্যক্ত যদি অব্যক্তেরই প্রকাশ না হত, তাহলে যা-কিছু আছে তা নিশ্চয় হয়ে থাকত, কেবলি আরো কিছুর দিকে আপনাকে নূতন করে তুল্ত না। এই আরো-কিছুর দিকেই সমস্ত জগতের আনন্দ কেন―এই অজানা আরো-কিছুর বাঁশি শুনেই সে কুল ত্যাগ করে কেন? ঐ দিকে শূন্য নয় বলেই, ঐ দিকেই সে পূর্ণকে অনুভব করে বলেই। সেই জন্যই উপনিষদ বলেচেন—ভূমৈব সুখং, ভূমাত্বেব বিজিজ্ঞাসিতব্যঃ। সেইজন্যই ত সৃষ্টির এই লীলা দেখ্চি, আলো এগিয়ে চলেচে অন্ধকারের অকূলে, অন্ধকার নেমে আস্চে আলোয় কূলে। আলোর মন ভুলচে কালোয়, কালোর মন ভুলেচে আলোয়।