গা বেয়ে বেয়ে ঝরনা ঝরে পড়েছে। মনে হচ্চে দৈত্যের দল সমুদ্রে ডুব দিয়ে তাদের ভিজে মাথা জলের উপর তুলেচে, তাদের জটা বেয়ে দাড়ি বেয়ে জল ঝরচে! এণ্ড্রুজ সাহেব বল্চেন দৃশ্যটা যেন পাহাড়-ঘেরা স্কটল্যাণ্ডের হৃদের মত, তেম্নিতর ঘন সবুজ বেঁটে বেঁটে পাহাড়, তেম্নিতর ভিজে কম্বলের মত আকাশের মেঘ, তেম্নিতর কুয়াসার ন্যাতা বুলিয়ে অল্প অল্প মুছে ফেলা জলস্থলের মূর্ত্তি। কাল সমস্ত রাত বৃষ্টি বাতাস গিয়েচে―কাল বিছানা আমার ভার বহন করে নি, আমিই বিছানাটাকে বহন করে ডেকের এধার থেকে ওধারে আশ্রয় খুঁজে খুঁজে ফিরেচি। রাত যখন সাড়ে দুপুর হবে, তখন এই বাদলের সঙ্গে মিথ্যা বিরোধ কর্বার চেষ্টা না করে তাকে প্রসন্ন মনে মেনে নেবার জন্যে প্রস্তুত হলুম। একধারে দাঁড়িয়ে ঐ বাদ্লার সঙ্গে তান মিলিয়েই গান ধরলুম “শ্রাবণের ধারার মত পড়ুক ঝরে।” এমনি করে ফিরে ফিরে অনেকগুলো গান গাইলুম,—বানিয়ে বানিয়ে একটা নতুন গানও তৈরি করলুম,―কিন্তু বাদলের সঙ্গে কবির লড়াইয়ে এই মর্ত্ত্যবাসীকেই হার মান্তে হল। আমি অত দম পাব কোথায়, আর আমার কবিত্বের বাতিক যতই প্রবল হোক না, বায়ুবলে আকাশের সঙ্গে পেরে উঠব কেন?
কাল রাত্রেই জাহাজের বন্দরে পৌঁছিবার কথা ছিল, কিন্তু এইখানটায় সমুদ্রবাহী জলের স্রোত প্রবল হয়ে উঠ্ল, এবং বাতাসও বিরুদ্ধ ছিল তাই পদে পদে দেরি হতে লাগল।