পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
জাপান-যাত্রী

শক্তি আছে, সে দিকে তাকে ততখানি বড় হয়ে উঠ্‌তে দিতে বাধা-দেওয়া যে স্বজাতিপূজা থেকে জন্মেছে, তার মত এমন সর্ব্বনেশে পূজা জগতে আর কিছুই নেই। এমন বর্ব্বর-জাতির কথা শোনা যায়, যারা নিজের দেশের দেবতার কাছে পরদেশের মানুষকে বলি দেয়,—আধুনিক কালের স্বজাতীয়তা তার চেয়ে অনেক বেশী ভয়ানক জিনিস, সে নিজের ক্ষুধার জন্যে এক-একটা জাতিকে-জাতি দেশকে-দেশ দাবী করে।

 আমাদের জাহাজের বাঁ পাশে চীনের নৌকার দল। সেই নৌকাগুলিতে স্বামী স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ে সকলে মিলে বাস কর্‌চে এবং কাজ কর্‌চে। কাজের এই ছবিই আমার কাছে সকলের চেয়ে সুন্দর লাগল। কাজের এই মুর্ত্তিই চরম মূর্ত্তি, একদিন এরই জয় হবে। না যদি হয়,―বাণিজ্যদানব যদি মানুষের ঘরকর্‌না, স্বাধীনতা সমস্তই গ্রাস করে চল্‌তে থাকে, এবং বৃহৎ এক দাস-সম্প্রদায়কে সৃষ্টি করে তোলে তারই সাহায্যে অল্প কয়জনের আরাম এবং স্বার্থ সাধন কর্‌তে থাকে, তাহলে পৃথিবী রসাতলে যাবে। এদের মেয়ে পুরুষ ছেলে, সকলে মিলে কাজ কর্‌বার এই ছবি দেখে আমার দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ল। ভারতবর্ষে এই ছবি কবে দেখ্‌তে পাব? সেখানে মানুষ আপনার বারোআনাকে ফাঁকি দিয়ে কাটাচ্চে। এমন সব নিয়মের জাল, যাতে মানুষ কেবলি বেধে-বেধে গিয়ে জড়িয়ে জড়িয়ে পড়েই নিজের অধিকাংশ শক্তির বাজে খরচ করে এবং বাকি অধিকাংশকে কাজে খাটাতে পারে না;―এমন বিপুল