পাতা:জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯৮ বাবুলার ফুলে ফুলে ওড়ে তার প্রজাপতি-পাখা, ননীর আঙ্গুলে তার কেঁপে ওঠে কচি নোনা শাখা । হেমন্তের হিম মাঠে, আকাশের আবছায়া ফুডে' বকবধৃটির মত কুয়াশায় শাদা ডানা যায় তার উড়ে’ ! হয়তো শুনেছ তারে,—তার সুর,-দুপুর আকাশে ঝরাপাতা-ভরা মরী দরিয়ার পাশে বেজেছে ঘুঘুর মুখে,—জল-ডাহুকীর বুকে পউষ নিশায় হলুদ পাতার ভিডে শিরশিরে পূবালি হাওয়ায় ! হয়তো দেখেছ তারে ভূতুড়ে দীপের চোখে মাঝরাতে দেয়ালের পরে নিভে যাওয়া প্রদীপের ধূসর ধোয়ায় তার সুর যেন ঝরে । শুক্ল একাদশী রাতে বিধবার বিছানায় যেই জ্যোৎস্না ভাসে তারি বুকে চুপে চুপে কবি আসে,– সুর তার আসে । উস্থুস্ এলো চুলে ভ'রে আছে কিশোরীর নগ্ন মুখখানি,— তারি পাশে সুর ভাসে,—অলখিতে উডে যায় কবির উড়ানি ! বালুঘড়িটির বুকে ঝিরি ঝিরি ঝিরি ঝিরি গান যবে বাজে রণতবিরেতের মাঠে ইঁটে সে যে আলসে,--আকাজে । ঘুম-কুমারীর মুখে চুমে খায় যখন আকাশ, যখন ঘুমায়ে থাকে টুনটুনি,—মধুমছি,—ঘাস, হাওয়ার কাতর শ্বাস থেমে যায় আমলকী সাড়ে, বাকী চাদ ডুবে যায় বাদলের মেঘের আঁধারে, তেঁতুলের শাখেশাখে বাছুড়ের কালে ডানা ভাসে, মনের হরিণী তার ঘুরে মরে হাহাকারে বনের বাতাসে । জোনাকীর মত সে যে দূরে দূরে যায় উড়ে উডে’— আপনার মুখ দেখে ফেরে সে যে নদীর মুকুরে ! জ্ব’লে ওঠে আলেয়ার মত তার লাল আঁখিখানি । আঁধারে ভাসায় খেয়া সে কোন পাষাণী । জানেনা তো কি যে চায়,—কবে হায় কি গেছে হারায়ে । চোখ বুজে খোজে একা,—হাতড়ায় আঙুল বাড়ায়ে কারে আহ –কাদে হাহা পূবের বাতাস, শ্মশানশবের বুকে জাগে এক পিপাসার শ্বাস ।