পাতা:জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কতো কাল নিঙড়াবে;— আঁচলে নাটার কথা ভুলে গিয়ে বুঝি

কিশোরের মুখ চেয়ে কিশোরী করবে তার মৃদু মাথা নিচু;

আসন্ন সন্ধ্যার কাক — করুণ কাকের দল খোড়ো নীড় খুঁজি

উড়ে যাবে; — দুপুরে ঘাসের বুকে সিঁদুরের মতো রাঙা লিচু

মুখ গুঁজে পড়ে রবে; - আমিও ঘাসের বুকে র’ব মুখ গুঁজি;

মৃদু কাঁকনের শব্দ – গোরোচনা জিনি রং চিনিব না কিছ—

'''তোমার বুকের থেকে একদিন চ’লে যাৰে তোমার সন্তান'''

তোমার বুকের থেকে একদিন চ’লে যাবে তোমার সন্তান

বাংলার বুক ছেড়ে চলে যাবে; যে ইঙ্গিতে নক্ষত্রও ঝরে,

আকাশের নীলাভ নরম বুক ছেড়ে দিয়ে হিমের ভিতরে

ডুবে যায়, – কুয়াশায় ঝ’রে পড়ে দিকে দিকে রূপশালী ধান

একদিন; – হয়তো বা নিমপেঁচা অন্ধকারে গা’বে তার গান,

আমারে কুড়ায়ে নেবে মেঠো ইদুরের মতো মরণের ঘরে—

হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ লেগে আছে আকাঙক্ষার—তবুও তো চোখের উপরে

নীল মৃত্যু উজাগর — বাঁকা চাঁদ, শূন্য মাঠ, শিশিরের ঘ্রাণ —

কখন মরণ আসে কে বা জানে—কালীদহে কথন যে ঝড়

কমলের নাল ভাঙে — ছিঁড়ে ফেলে গাংচিল শালিখের প্রাণ

জানি নাকো; — তবু যেন মরি আমি এই মাঠ ঘাটের ভিতর,

কৃষ্ণা যমুনার নয় — যেন এই গাঙুড়ের ঢেউয়ের আঘ্রাণ

লেগে থাকে চোখে মুখে — রূপসী বাংলা যেন বুকের উপর

জেগে থাকে; তারি নিচে শুয়ে থাকি যেন আমি অর্ধনারীশ্বর।


'''গোলপাতা ছাউনির বুক চুমে নীল ধোয়া সকালে সন্ধ্যায়'''

গোলপাতা ছাউনির বক চুমে নীল ধোঁয়া সকালে সন্ধ্যায়

উড়ে যায়—মিশে যায় আমবনে কার্তিকের কুয়াশার সাথে;

পুকুরের লাল সর ক্ষীণ ঢেউয়ে বার বার চায় যে জড়াতে

করবীর কচি ডাল; চুমো খেতে চায় মাছরাঙাটির পায়;

এক-একটি ইট ধ্বসে — ডুবজলে ডুব দিয়ে কোথায় হারায়

ভাঙা ঘাটলায় এই — আজ আর কেউ এসে চাল-ধোয়া হাতে

বিনুনি খসায় নাকো – শুকনো পাতা সারাদিন থাকে যে গড়াতে;

কড়ি খেলিবার ঘর মজে গিয়ে গোখুরার ফাচলে হারায়;


ডাইনীর মতো হাত তুলে-তুলে ভাঁট আঁশশ্যাওড়ার বন

বাতাসে কি কথা কয় বুঝি নাকো, — বুঝি নাকো চিল কেন কাঁদে

পথিবীর কোনো পথে দেখি নাই আমি, হায়, এমন বিজন

শাদা পথ — সোঁদা পথ — বাঁশের ঘোমটা মাথে বিধবার ছাঁদে

షితు