পাতা:জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড).pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সবুজ জঙ্গল ছেয়ে শবপুরির—শ্ৰীমন্তও দেখেছে এমন ঃ যখন ময়ুরপঙ্খী ভোরের সিন্ধর মেঘে হয়েছে অলাক, সদরে প্রবাস থেকে ফিরে এসে বাংলার শপরির বন দেখিয়াছে—অকস্মাৎ গাঢ় নীল ; করমণ কাকের ক্লান্ত ডাক শুনিয়াছে—সে কত শতাবদী অাগে ডেকেছিলো তাহারা যখন । এই ডাঙা ছেড়ে ছায় রূপ কে খুজিতে যায় পৃথিবীর পথে এই ভাঙা ছেড়ে হায় রপে কে খুজিতে যায় পথিবীর পথে । বটের শুকনো পাতা যেন এক যগোস্থের গলপ ডেকে আনে ঃ ছড়ায়ে রয়েছে তারা প্রাস্তরের পথে পথে নিজন অম্ৰাণে ;— তাদের উপেক্ষা ক’রে কে যাবে বিদেশে বলো—আমি কোনো-মক্তে বাসমতী ধানক্ষেত ছেড়ে দিয়ে মালাবারে —উটির পবতে ষাবো নাকো ; দেখিব না পামগাছ মাথা নাড়ে সমুদ্রের গানে কোন দেশে—কোথায় এলাচিফুল দারুচিনি বারণীর প্রাণে বিননি খসায়ে বসে থাকিবার স্বপ্ন আনে ;–পথিবীর পথে যাব নাকো ঃ অশবথের ঝরাপাতা মান শাদা ধুলোর ভিতর, যখন এ-দু’পহরে কেউ নাই কোনো দিকে—পাখিটও নাই, অবিরল ঘাস শুধু ছড়ায়ে রয়েছে মাটি কাঁকরের পর, খড়কুটো উলটায়ে ফিরিতেছে দ'-একটা বিষন্ন চড়াই, অশবথের পাতাগুলো প’ড়ে আছে মান শাদা ধুলোর ভিতর ; এই পথ ছেড়ে দিয়ে এ-জীবন কোনোখানে গেল নাকো তাই । এখানে আকাশ লীল—নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল এখানে আকাশ নীল—নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল ফুটে থাকে হিম শাদা—রং তার আশিবনের আলোর মতন ; আকন্দকুলের কালো ভীমরুল এইখানে করে গঞ্জেরণ রৌদ্রের দরপর ভরে ;–বার বার রোদ তার সচিক্কণ চুল কঠিাল জামের বসুকে নিঙড়ায় ;– দহে বিলে চঞ্চল আঙুল বলায়ে বলায়ে ফেরে এইখানে জাম লিচু কঠিালের বন, ধনপতি, শ্রীমন্তের, বেহুলার, লহনার ছেৈয়ছে চরণ ; মেঠো পথে মিশে আছে কাক আর কোকিলের শরীরের ধল, কবেকার কোকিলের, জানো কি তা ? যখন মুকুন্দরাম, হায়, লিখিতেছিলেন বসে দ’-পহরে সাধের সে চণ্ডিকামঙ্গল, কোকিলের ডাক শুনে লেখা তাঁর বাধা পায়—থেমে থেমে যায় – অথবা বেহলো একা যখন চলেছে ভেঙে গাঙড়ের জল সন্ধ্যার অন্ধকারে ধানক্ষেতে, আমবনে, অপটি শাখায় কোকিলের ডাক শুনে চোখে তার ফটেছিলো কুয়াশা কেবল ।

4