পাতা:জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা.djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।


দেখা দিলো; ঢেউ নয়, বালি নয়, ঊনপঞ্চাশ বায়ু, সূর্য নয় কিছু—
সেই রলরোলে তিন চার ধনু দূরে-দূরে এয়োরোড্রোমের কলরব
লক্ষ্য পেলো অচিরেই— কৌতূহলে হৃষ্ট সব সুর
দাঁড়ালো তাহাকে ঘিরে বৃষ মেষ বৃশ্চিকের মতন প্রচুর;
সকলেরই ঝিঁক চোখে— কাঁধের উপরে মাথা-পিছু
কোথাও দ্বিরুক্তি নেই মাথার ব্যথার কথা ভেবে।
নিজের মনের ভুলে কখন সে কলমকে খড়্গের চেয়ে
ব্যাপ্ত মনে ক’রে নিয়ে লিখেছে ভূমিকা, বই সকলকে সম্বোধন ক’রে!
কখন সে বজেট-মিটিং, নারী, পার্টি-পলিটিক্স, মাংস, মার্মালেড ছেড়ে
অবতার বরাহকে শ্রেষ্ঠ মনে করেছিলো;
টোমাটোর মতো লাল গাল নিয়ে শিশুদের ভিড়
কুকুরের উৎসাহ, ঘোড়ার সওয়ার, পার্শী, মেম, খোজা, বেদুইন, সমুদ্রের তীর,
জুহু, সূর্য, ফেন, বালি— সাণ্টা ক্রুজে সব চেয়ে পররতিময় আত্মক্রীড়
সে ছাড়া তবে কে আর? যেন তার দুই গালে নিরুপম দাড়ির ভিতরে
দুটো বৈবাহিক পেঁচা ত্রিভুবন আবিষ্কার ক’রে তবু ঘরে
ব’সে আছে; মুন্সী, সাভারকর, নরীম্যান তিন দৃষ্টিকোণ থেকে নেমে এসে
দেখে গেল, মহিলারা মর্মরের মতো স্বচ্ছ কৌতূহলভরে,
অব্যয় শিল্পীরা সব: মেঘ না চাইতে এই জল ভালোবাসে।


সময়ের কাছে

সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ’লে যেতে হয়
কি কাজ করেছি আর কি কথা ভেবেছি।
সেই সব একদিন হয়তো বা কোনো এক সমুদ্রের পারে
আজকের পরিচিত কোনো নীল আভার পাহাড়ে
অন্ধকারে হাড়কঙ্করের মতো শুয়ে
নিজের আয়ুর দিন তবুও গণনা ক’রে যায় চিরদিন;
নীলিমার থেকে ঢের দূরে স’রে গিয়ে,

১০২