পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পূর্ণিমা

সন্তোষের অবিবাহিতা বড় শালী চপলা [চামেলি] বিধবা আশ্রমের ইস্কুলের কাজ ছাড়বার পর থেকে সন্তোষ এ মেয়েমানুষটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েছে। এই মেয়ে কটির বাপ নেই, মা নেই—একটি বুডো মামা টিকির-টিকির করছেন বটে—কিন্তু কত দিন আর এ-রকম চলতে পারে ভাবতে গেলে সুস্থির ভাবে জীবনটাকে অনুভব করতে পারা যায় না। অন্য কোনো এক রকম ব্যবস্থা হলেই ভাল হত; অন্তত এই বিধবা আশ্রমের চাকরিটিও যদি থাকত।
চাকরি চপলা নিজের ইচ্ছায়ই খুইয়েছে। সন্তোষ ভাবছে, জীবনের যে-অবস্থা তাদের তাতে মান-অপমানবোধ ওর একটু কম হলেই ভাল হত। নিজে সন্তোষও চাকরি খুঁজছে।
টাকাকড়ির অভাবে কামনা-আকাঙ্ক্ষা তো ঢের দূরে—মানুষের জীবনের সাধারণ ধর্মটারই এত অপব্যবহার চলেছে!
চামেলিকে সে আজ আশ্রয় দিতে পারছে না, তার অন্য ভাইবোনদেরও না, বুড়ো মামাশ্বশুর মানুষটিরও কোনো কাজেই আজ সে লাগল না—কে জানে এদের সকলের কাজে কবেই-বা সে লাগতে পারবে? শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে সন্তোষকেই এরা একমাত্র নির্ভরের জিনিশ বলে বুঝে নিতে চাচ্ছে কিন্তু তবুও নিজের শক্তি-সামর্থ্যর কথা ভেবে সন্তোষ কিছু বুঝে দেখতে চাচ্ছে না—মান-অপমান বোধ নিয়ে এরা সরেই থাকছে।

সেই ভাল!

১৫১