পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সন্তোষের স্ত্রী পূর্ণিমাও স্বামীকে ভরসা দিচ্ছে—চাকরি-বাকরি টাকাকড়ি সচ্ছলতা শিগগিরই হবে তাদের। তার পর দিদিকে, ছোট বোন টুক্কুকে, আর মামাকে পূর্ণিমা নিজের কাছে এনে রাখবে।
ভবিষ্যতের এই ব্যবস্থার কথা ভেবে পরিতৃপ্তি পাচ্ছে পূর্ণিমা। পূর্ণিমার কাছে এটা দায়িত্ব পালনের তৃপ্তি নয় শুধু, আরো ঢের সরসতা আছে এর ভিতর। পূর্ণিমা যেমন, তার বোন কটিও দেখতে খুবই সুন্দর।
সন্তোষও নিজে জানে শালী কটিকে নিজেদের আশ্রয়ে এনে শুকনো কঠিন কর্তব্যপালন করাই হল না শুধু: এর ভিতর ঢের সফলতা ও কোমলতাও আছে—বেশ একটা নীড় তৈরি হবে, যেন পৃথিবীর কয়েকটি নিরুপম নিবিড় পাখিদের নিয়ে।
পূর্ণিমাও যেমন—তার বোন কটিও দেখতে খুবই সুন্দর। কিন্তু তবুও এর ভিতর কোনো অবান্তর ক্ষুধা, পিপাসা, কামনার কথা নেই—কিন্তু সহজ সরসতা সেদিন প্রতি খুঁটিনাটিতেই কত যে ফুটে উঠবে জানে না কি সে?
সন্তোষ সবই জানত।
পূর্ণিমাও যেমন—তার বোন কটিও দেখতে খুবই সুন্দর।
বিধবা আশ্রমের কাজটি, চামেলিদি, এদের সকলেরই জীবনের বর্তমান এই দুরবস্থার সময় রাখলেই পারত। তবুও যে কয়েকটি টাকা পাচ্ছিল তাতে ওদের তো চলে যেত। সন্তোষরাও নিজেদের টেনে-হিঁঁচড়ে চালাচ্ছিল এক রকমে। কিন্তু এখন কী হবে, না হবে, ভাবতে পারছিল না। সন্তোষ। সকলকে নিয়ে একটা সুব্যবস্থার ভিতর থাকতে হলে যে সুস্থির চেষ্টার প্রয়োজন, জীবনের সেই স্থির ধীরতা এমন অন্যায্য রকমে ও আকস্মিকভাবে আঘাত খেয়ে বসেছে যে ওদের এখন নানা রকম বিপাকই সম্ভব —বিশেষত ওদের রূপ চারদিকে যে-রকম লোলুপতা জাগিয়ে চলে এবং নিজেদের দুজনের তখন দুশ্চিন্তার আর শেষ থাকবে না।
সন্তোষের দুশ্চিন্তার গভীরতা অনেক দূর পর্যন্ত পোঁছুবে।
সন্তোষ খবরের কাগজের বিশেষ কলমগুলো দেখে যাচ্ছিল।
পূর্ণিমা বললে, 'চিঠি আছে।'
—'কার?'

—‘মামার।'

১৫৩