পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চিঠি পড়তে-পড়তে পূর্ণিমা হঠাৎ অত্যন্ত উৎফুল্ল হয়ে উঠে বললে, ‘সুখবর আছে।'
কাগজের ওপর থেকে উঁঁকি মেরে সন্তোষ বললে, 'কী রকম?'
—'ভেবে দেখো তো কী।'
পূর্ণিমার সুখবরের জন্য তেমন কিছু কৌতুহল না থাকলেও সন্তোষ একটু বুঝি আগ্রহ দেখাতে চেষ্টা করছে—বেচারি আঘাত পাবে না-হলে।
পূর্ণিমা বললে —'কই, বলতে তো পারলে না।'
সন্তোষ কাগজের এক শিট তুলে নিয়ে বললে, ‘দাঁঁড়াও না, আগে বলো সুখবর কার, আমাদের না অন্য কারো?'
—'ধেত্তরি তার! পূর্ণিমা ভ্রূকুটি করে হেসে উঠে বললে, 'তোমার মুণ্ডু, দিদির বিয়ে হচ্ছে।'
—'বিয়ে? চামেলিদির?'
—'বিশ্বেস হচ্ছে না বুঝি?'
সন্তোষ প্রথম ধাক্কাটা একটু সামলে নিয়ে বললে—'সুন্দরী মানুষদের বিয়ে না হওয়াটাই তো রহস্যের জিনিশ।'
একটু থেমে বললে —'আমি এত দিন ভাবছিলাম যে দিদি হয় তো সঙ্কল্পই করেছেন যে বিয়ে করবেন না; নইলে অমন রুপসীর জন্য পাত্রের অভাব ছিল?'
পূর্ণিমা শুরু করলে, 'রূপসী কি টুকু নয়? আমি নই? লোকে বলে দিদিরই বরং আমাদের চেয়ে রূপ কম।'
—‘কথাটা সত্যি বটে।'
পূর্ণিমা বললে, কিন্তু আমরা গরিব বলে—'
সন্তোষ বললে, 'তা ঠিক; তোমার মত সুন্দরী যদি বড লোকের ধরে হত, তাহলে বিয়ে তো বিয়ে— তোমকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখবার অধিকারও হয় তো আমার থাকত না।'
হাসছিল সন্তোষ।

পূর্ণিমা হয় তো একটু আঘাত পেয়ে নিজের জীবনের অন্য রকম একটা সম্ভাবনার কথা ভাবছিল। তা সে ভাবতে পারে। এত রুপলাবণ্য, সুস্থতা, সামর্থ্য নিয়ে কী পুরস্কার পেল সে? দিনের পর দিন একটু সামান্য সচ্ছলতার

১৫8