পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে নিরবচ্ছিন্ন সেঁদাগন্ধ বেরোয় নিশ্চয়ই ভাল লাগবে রাজেনের—অফুরন্ত সবুজ ঘাস, অবাধগামিনী পদ্মা ও কৰ্ণফুলীর গভীর জঘন ও জঙ্ঘা । অন্ধকারে ও জোৎস্নায় ; শ্ৰাবণের রাতে উচ্ছিত কলরবে ; জীবনের উদাম বীজ সঞ্চারণের পালা তাদেররকম লাগে রাজেনের —এই ভাল —চারদিককার নদী-সমুদ্র-অরণ্যের প্রাণধারণের অানন্দ ও প্ৰাণ জননের প্রসারণের তীব্ৰতা । জীবনের গভীরতা বলতে এই-ই সে বোঝে আমিও কতদিন এই রকম বুঝতাম—-তারপর বেদনা ও নিস্থলতার পথে চলতে-চলতে হৃদয় ভিন্ন মোড় নিল । শীতের রাতে আমহাস্ট ষ্টিটে কুকুর ও ঐ ফুটপাথের ভিতর একজন দাড়ি অলা নিষ্পেষিত ভিখারির জীৰ্ণশীৰ্ণ মুখ কেমন যেন নিবিড় হয়ে বুকের ভিতর এসে লাগে । গ্রে ট্ৰিটে অন্ধকারের ভিতর সারি-সারি যে পহীনা দাড়িয়ে অাছে তাদের দেখে কেমন একটা খোচা একেবারে এড়িয়ে যেতে পারি না। । কলেজ ষ্টিটে হাটতে-হাটতে দেখি ফুটপাথে ন্যাকড়া জড়ানো পায়ে পা ছড়িয়ে কুণ্ঠরোগীরা বসে অাছে সব । নুলো হাত তুলে অবিশ্ৰাম সেলাম ঠুকছে, রাস্তার থেকে এদের তাড়িয়ে দেবার জন্য খবরের কাগজে অবিরাম লেখালেখি চলছে । অামার ইচ্ছা করে এদের গুলি করে রাস্তা সাফা করে ফেলি—জীবনের এই সব বীভৎসতা বিকৃতি ও পরাজয়ের মুখোমুখি এসব হৃদয় কোনো পথ খুঁজে পায় না, মেসের শূন্য ঘরে ফিরে এসে অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে থেকে কোনো বিধাতাকে খুঁজে পাই না । আন্তরিকভাবে আত্মদান করে কোনো । প্ৰাৰ্থনা করতে পারি না । দাত ব্যথা করে । একটা থেকে মাংস রেস্টারেণ্ট রান্নার গন্ধ ভেসে অাসে, রেডিওর দোকানে মজলিশি গান অক্লান্ত ভাবে বঙ্কার দিয়ে চলে, একটা চুরুট মুখে দিতে গিয়ে দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ে । —মাড়ি ও দাতই জীবনের সবচেয়ে কৃতী জিনিশ হয়ে দাড়ায় । গবৰ্মেণ্টের ডিপাৰ্টমেণ্টে একশ টাকার চাকরি করে রাজেন এ সবের কিছু বুঝবে না । তবুও বললাম—“আমি ঈশোপনিষৎখানা এনে তোমাকে দেখাচ্ছি রাজেন । ‘কী দেখাবেন ? —“কয়েকটা শ্লোক পড়ব তোমার কাছে হেঃ হেঃ বিশ্বাস করেন আপনি ? —“মাঝে-মাঝে নিজের মনে অন্ধকারের ভিতর ঝঙ্কার দিয়ে পড়তে গেলে খুব