পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরুনির কোনো ব্যবহার নেই। খুব সাধারণ এলবার্ট জুতো পায়। ভালো করে বুরুশও করা নেই। মুখে আন্তরিকতার চেয়ে আগ্রহ বেশি; চোখ চতুর ও চিন্তাশীল; জীবন পণ্ড হল, না কৃতকার্য হল, সে বিষয়ে সমস্যা এখনো যেন শেষ হয় নি, মুখাবয়বের উপর এ-রকম এক ভাব; হৃদয়ে পরিকল্পনা ও উৎসাহের অভাব নেই। চেয়ারটা টেনে বসে, আক্ষেপ করে মাথা নেড়ে—তোমাদের দেখে বড় দুঃখ হয় আমার; এই তো বি-এ পাশ করেছ। বি-এ না এম-এ ? এম-এ ? বেশ-বেশ, তা হলে তো গাজন আরো চমৎকার—কুড়িয়ে-বাড়িয়ে বয়সও, তোমার বাবা বললেন, ు বিয়ে করেছ, সন্তান রয়েছে অথচ একটা মুটের যা সম্বল তাও তোমার I’ একটা চুরুট জুলিয়ে—দিনান্তে দুটো পয়সা নিজের বলে খরচ করতে পার ? কী আক্ষেপের কথা। চাকরি খুঁজছ? يوم — এবার যাব কলকাতায়।’ —‘কবে ?’ — এই সপ্তাহখানেকের মধ্যে।’ —‘কী, চাকরি পাবে? — দেখি।” হাত নেড়ে—"মিছে কেন কলকাতায় ফোপর দালালি করতে যাও? তুমি মনে করেছ আমি একা এম-এ পাশ করে বসে আছি—এমন আশি হাজার ছেলে তোমার মতো বাংলাদেশের পথে-ঘাটে ঘুরছে—একটা ছাগল সারাদিন চরে যে ঘাসটুকু পায় তাও জোটে না।’ চুপ করে ছিলাম। খানিক ধোয়া ছেড়ে—মিছিমিছি নিজেকে ঠকিও না; সে যাদের শ্বশুর-সম্বন্ধী থাকে তাদের চাকরি জোটে—এ কাঠামো তোমার কিছু হবে না—একটা টেকনিক্যাল কিছু শেখো।' কোনো জবাব দিলাম না। —‘শিখে এসো।’ — বেশ, তা হলে ব্যাঙ্কিং শেখো-না। তাও টাকা নেই? আচ্ছা, তা হলে নিরিবিলি বসে দর্জিগিরি শেখো না কেন ?” খানিকটা ধোয়া ছেড়ে বললেন—“কিংবা ডিমের ব্যবসা করতে পার, ছোট ডিমের ? —“ পোলটি ফার্মিং। —‘আঃ, সে তো ঢের বড় কথা হল; এক নিশ্বাসে মগডালে চড়ে বসতে বলি না। আমার অবিশ্যি একটা কথা অনেক সময়ই মনে হয়েছে এই যে যদি কোনো ভদ্রলোকের ছেলে দেশগায়ে এসে দুধের ব্যবসাটা ধরে, তা হলে টাটকা দুধও খেতে পারি, চাকরিসমস্যাও খানিকটা মিটে যায়, কী বলো ?” —“দেখলে হয় । ভুকুটি করে হেসে—আরে দূর! আজকালকার শিক্ষাদীক্ষা পেয়ে ভদ্রলোকের ছেলেরা যত চশমখোর চামার হয়েছে, ছোট লোকরা কি আর তত রে ভাই? না হয় জোলো দুধ দিচ্ছে কিন্তু তোমরা ব্যবসা শুরু করলে পিটুলি গোলা খেতে হবে। Σ Ο Φ.