পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় শেষ হয়ে গেছে, শ্রাবণ চলছিল। এই বর্ষায় বইয়ের বড় ক্ষতি হয়। কয়েক দিন আগে স্টেশনের বইগুলো দেখেছিলাম—স্টলের সমস্ত বইগুলোই প্রায় পুরোনো, ছেড়াখোড়া মালিকের সঙ্গবিহীন গ্রন্থিহীন জীবনের জর্জরতার অপরাধ এদের চোখেমুখে। নতুন বইও কয়েকখানা আছে। গত বছর কলকাতায় যখন পাঁচশ টাকা ট্যুইশান করি, ট্রাম-সিনেমা ও চায়ের পথ এড়িয়ে, খুব একটা শাদাসিধে মেসের জীবন্মৃত অবস্থার ভিতরে থেকে কয়েকখানা বই কিনতে পেরেছিলাম: ইংরেজি কবিতার বই দুটো, একখানা আমেরিকান উপন্যাস গত শতাব্দীর, একখানা নভেল এবং আরো দু-তিনখানা বই। ক্যাটেলগ দেখে কিনি নি; কারো পরামর্শ নিয়েও নয়; ইংরেজি পত্রিকাগুলোর সমালোচনা ও খবরাখবর আমি অনেক দিন ধরে দেখি নি; বই ক-খানা কিনেছিলাম নিজের মনের কর্তৃত্বে আমি। টিনের সুটকেসে করে বইগুলো দেশে নিয়ে এলাম; খড়ের ঘরের জানলার কাছে বসে পড়লাম; বাইরে বিকেলের আলোয় সন্ধ্যার অন্ধকারে কখনো শরৎ কখনো হেমন্তকে দেখেছি: শালিখ ঘাসেঘাসে পোকা খুঁটে খেয়েছে, ফড়িং উড়েছে, পাতা খসেছে, দাঁড়কাকের দল গভীর কীর্তির অব্যর্থতায় ঘরের দিকে উড়ে গেছে তাদের, সন্ধ্যামণির পাপড়ির মতো লাল মেঘে আকাশ গেছে ছেয়ে। আমাদের ঘরে উইয়ের অত্যাচার বড় বেশি; মেঝেটা মাটির—বডড স্যাতসেতে; বর্ষাকালে উইয়ের হাত থেকে নিস্তার পাবার জন্য নানা রকম চেষ্টা চলে বটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজীব নয়—খুব সতেজ ও পরিহাসপ্রিয়। মিশরে যিনি একদিন পঙ্গপাল ছেড়ে দিয়ে মজা দেখেছিলেন, আমাদের প্রিয় জিনিশের, ছিবড়ে কুড়িয়ে-কুড়িয়ে, তারপর আগুন জুলি ও চিন্তা করি; তার গভীর শক্তিকে নমস্কার জানাই। দু-তিনদিন আগে শেলফের বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখেছি একবার। আজ আরেকবার দেখা যাক, কিন্তু যাই-যাই করে আর যাওয়া হয় না; জানালার ভিতর দিয়ে বর্ষার ১৩