পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিকে তাকিয়ে মন অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। দুপুরবেলা দেখলাম বইয়ের তাক ঠিকই আছে, উইয়ে ধরে নি, নতুন বইয়ের লাল-নীল মলাটগুলো কেমন ছাতকুড়োয় শাদাশাদা হয়ে গেছে। . . কল্যাণীকে বললাম—আমি চলে গেলে এই বইগুলো মাঝে মাঝে দেখো।' কল্যাণী সেলাই করছিল; কোনো জবাব দিল না। বইগুলো মুছতে-মুছতে–মাঝে মাঝে রোদে দিও এগুলো।’ কল্যাণী কোনো কথা বললে না। সে আমার উপর বিরক্ত; দেশে এসে বলেছিলাম ছ-সাত দিন থাকব; থাকতেথাকতে তিন মাস হয়ে গেল। প্রায় এক মাস থেকে বলছি, চাকরির চেষ্টায় কলকাতায় আজকালই যাব। কিন্তু আজও গড়িমসি করে দেশের বাড়িতেই কাটাচ্ছি। এত অপরাধ ও বেদনার জন্য তার জীবন প্রস্তুত ছিল না। সে একটা অস্টিন মোটরকার চায় না বটে, সুসজ্জিত বাংলোও চায় না, আমাকে যখন প্রথম বিয়ে করেছিল, তিন বছর আগে, মানুষের জীবনের নিদারুণ পরিমাপের টের যখন সে পায় নি, তখন কী চাইত জানি না, কিন্তু আজ একজন সামান্য ইস্কুলমাস্টারের গৃহস্থালির ব্যবস্থাও নিজের হাতে যদি সে পায়, জীবনকে ধন্য মনে করে। কিন্তু এমনই ব্যবস্থা, একটা ইস্কুলমাস্টারিও জোটে না। আচ্ছা, আমি যদি ট্রাম কন্ডাকটার হই? কী বলো কল্যাণী ? টি-সি হবার জন্যই এম-এ পাশ করেছিলে ?’ কিন্তু সেও তো কাজ—মাসে-মাসে ২৫, ২০ কি দেবে না ?’ ‘বেশ তো, তা হলে তাই করো গিয়ে।’ ‘এবার কলকাতায় গিয়ে যা হয় একটা কিছু করবই।’ কল্যাণী চুপ করে রইল। কী করব জানো ?” কোনো সাড়া নেই। হেমন্তের বিকেলের নিস্তব্ধ স্নানতার ভিতর একটা রুগণ হাসের মতো শুকনো পাতার উড়াউড়ির মধ্যে হংসগামিনী গতিতে একা-একা অন্ধকারের ভিতর হারিয়ে যাচ্ছে। গলা খাকরে—‘কী করব, জানো কল্যাণী ? কল্যাণী আঁতকে উঠে—“বাপরে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এ-রকম। বেটপকা চেচিয়ে ওঠো কেন ? 'না, চেচাই নি তো’— না, না, এ-রকম আচমকা ভয় পাইয়ে দিও না, ইস, কী রকম ধড়ফড় করছে বুক। ‘এখনো ? কী হল ?’ কিছু না, বাপরে, কী রকম চমকে গিয়েছিলাম। “নিশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে? কল্যাণী—‘কথা বোলো না, আমাকে একটু চুপ থাকতে দাও; কথা বলতে গেলে হার্টে কষ্ট হয়।" বুকে হাত বুলিয়ে দেব ? ‘থাক্ S 8