পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিরঞ্জন এমন সরস মানুষ। চুরুটটা থেকে ছাই ঝেড়ে ফেলল প্রভাত; অনেকক্ষণ ধরে নিভে রয়েছে চুরুটটা; দেশে গিয়ে এবার নানারকম পুরোনো জিনিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা পাকাতে ইচ্ছা করে। দেশের হাই স্কুলটা প্রায় চল্লিশ বছরের পুরোনো। অনেক দিন ইস্কুলটার কোনো খোঁজখবর রাখে না প্রভাত; কতকাল ইস্কুলটার মুখও দেখে নি সে। প্রায় বছর পনেরোষোলো আগে সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে সেই যে পেরিযে গেছে প্রভাত—এই ষোলোটা বছর ইস্কুলের দিকে আর মাড়ায় নি সে— দিন-রাত্রি ফঁাকে ইস্কুলটার কথা যখনই মনে হয় হৃদয়টা এমন নরম হয়ে পড়ে— ইস্কুলের সামনের প্রকাণ্ড মাঠটার কথা মনে পড়ে; ছুটির পর বিকেল বেলার সফেন সোনালি রোদের ভিতর অলস মাছির মতো তারা কয়েকজন মাঠের এক ধূসর খড়ির মতো মাটির ঘ্রাণ—শুকনো ফুল ও নিম পাতার স্তুপ—লাল বটফলের গন্ধ—সেদিন এ সব বড় একটি গ্রাহ্যের জিনিশ ছিল না। কিন্তু আজ এই সবের কিনারে বসে ধীরে-ধীরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেও ভালো লাগে। এর চেয়ে নিবিড় সুন্দর সফল পরিসমাপ্তি কোথাও নিয়ে যেতে পারে না আর। মাঠটার কিনারে একটা মস্তবড় তেঁতুল গাছ ছিল—কী যে মিষ্টি তেঁতুল—টিফিনের ছায়ায় চুপচাপ গিয়ে বসত— সেই তেঁতুল গাছটা আছে আজ ? ড্রিল মাস্টার ছিলেন দ্বিজেনবাবু। লম্বা-চওড়া জোয়ান চেহারা—পাঞ্জাবি পালোয়ানের মতো দেখতে, হাতে সব সময়ই একটা বেত থাকত; ডেপো ছেলেদের দু-তিন ঘা লাগাতেন মাঝে-মাঝে—কিন্তু এমন মোলায়েম ভাবে যে তাতে চামড়া জুলত না কখনো, সুড়সুড় করত শুধু; বেত নিয়ে আস্ফালন করতেন বেশি—ছেলেদের ধরে মারা তার ধাতে একদম ছিল না। ছেলেদের সারিবদী সাজিয়ে কুচকাওয়াজ করাতেন—কখনো রাইট টার্ন, কখনো লেফট টার্ন অ্যাবাউট টার্ন, মাঝে-মাঝে হল্ট বলে চিৎকার করে উঠতেন। চমৎকার আবহাওয়া সৃষ্টি করে ফেলতেন তিনি : প্রত্যেকেই নিজেকে চোস্ত পদাতিক বলে মনে করত—কোথাও একটা সঙ্গীন লড়াই করতে চলেছে। প্রভাত মনে মনে ভাবত ভবিষ্যৎ জীবনেও সে এমনি আওয়াজ করলে—কাধে বন্দুক ফেলে মার্চ করে চলবে—সৈন্য হবে—কে জানে হয়তো নেপোলিয়ন হবে কিংবা মার্শাল নে— বেশ দিনগুলো ছিল সব। ལཱ་ཀྱཱ། ཤྭ་བ ཤར་ན་ལྕང་མཐར་ཤ། མི་འགཙོ་ཝ་ཨག༢ ཐལ་ཁ་ཨར་ཝ་ཁ༧ ཐལ་ཟ ཀག། যেত যাদ। দ্বিজেনবাবু কি বেঁচে আছেন? এখনো ছেলেরা সেই মাঠে গিয়ে জড়ো হয় ? ড্রিল করে? কী কথা ভাবে তারা? বুনো আনারস খুঁজে বেড়ায় ? শুকনো বটপাতার চটের গন্ধ, ভালো লাগে তাদের ? তাদের জীবনের সংস্পর্শে আসতে ইচ্ছা করে বড়; সমস্ত নতুন মুখ–কিন্তু তাদের ভিতরেই সেই পনেরো বছর আগের স্কুলের ক্যাপ্টেন অবিনাশ বেঁচে রয়েছে, সেই ১২৩