পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেটি মৃদুভাবে একবার গলা খাকরে—তা আছে কি? প্রভাত কোনো জবাব দিল না। —“শুনলাম, আপনি আট-দশ বছর হল এম-এ পাশ করেছেন; তাই না কি?’ কোনো উত্তর না পেয়ে ছেলেটি বললে—“হা, আমি শুনেছি তাই। ছাত্র পড়াবার আছে আপনার। ম্যাট্রিক থেকে বি-এ অদি অনেক ছেলেই পড়িয়েছেন না o’ ছেলেটি কুষ্ঠিত অমায়িক চোখ তুলে প্রভাতের দিকে তাকাল— প্রভাত বালিশে মাথা রেখেই—“কার্তিক চলে গেছে নাকি? —‘হ্যা দেশে গিয়েছেন। —‘কেন ?? — গরমের সময় এই তিন-চারটা মাস দেশেই কাটান তিনি, প্রফেসার মানুষ, ছুটিও তো কম নয়— —‘এই তিন মাসের জন্য অনেক টিউটরই তো প্লেতে পারেন আপনি। ছেলেটি একটু বিস্মিত হয়ে প্রভাতের দিকে তাকাল; সামান্য একটা টিউশন পাবার জন্য কাঠপিপড়ের মতো মানুষের দঙ্গল কতবার তাদের বাড়ির দেউড়িতে ধরনা দিয়েছে—কলকাতা শহরের আধাআধি লোকের মাথা তার ভিতর খুঁজে পাওয়া যায়; আর এ মানুষটিকে নিজে যেচে সে কাজ দিতে এসেছে, আর তার এই রকম জবাব ? প্রভাত——‘দেখুন, আমার বড্ড অবসন্ন বোধ হয়— —‘কেন বলুন তো?” —‘আজ আমার দেশে যাবার কথা ছিল।’ —ও, সেখানে কারো অসুখ করেছে বুঝি ? প্রভাত—'কারো অসুখ না করলে দেশে যেতে নেই?’ —‘না, তা নয় অবিশ্যি, তবে আমি ভেবেছিলাম— —“চার বছর আমি বাড়ি যাই নি। খোকা আছে। মা আছেন। স্ত্রী আছে। কেতু বলে একটা কুকুর আছে। এদের দেখতে ইচ্ছা করে না? ছেলেটি একটু হেসে বললে—তাই তো? দুপুরবেলা প্রভাত বিছানা বাধাছাদা করছিল—কার্তিক এসে ঢুকল। প্রভাত চোখ তুলে—“তুমি? বাঃ, আমি ভেবেছিলাম তুমি চলে গিয়েছ— —‘দাৰ্জিলিং গিয়েছিলাম, ফিরবার পথে আবার কলকাতা হয়ে বাড়ি যাচ্ছি— —‘ও, দার্জিলিং গিয়েছিলে বুঝি? তা দার্জিলিং কেমন জায়গা কার্তিক? বেশ চমৎকার, না? একবার গিয়ে দেখতে হবে তো! পয়সাই-বা কোথায় ? —“তুমি তো আচ্ছা ইডিয়েট। —‘কী রকম?” —সমীরকে পাঠিয়েছিলাম তোমার কাছে—তুমি তাকে ফিরিয়ে দিলে যে।’ —ও, সেই কথা?” —‘এমন আহাম্মক তুমি! Տ ՀԳ