পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরো একটা দড়ির দরকার; প্রভাত খাটের নীচের থেকে একটা মস্তবড় লম্বা দড়ি বের করে বিছানাটা বাঁধতে-বাঁধতে ভাবল—এ পাঁচ বছর জীবনটাকে নেড়েচেড়ে দেখলাম, সংসারে যারা সফল হবে তাদের জাত আলাদা :ভালোবাসার চেয়ে সফলতাকেই তারা ভালোবাসে বেশি—আমার ঠিক উণ্টো, প্রেম, দক্ষিণ্য, মমতার, ঘরানা গন্ধেই তৃপ্তি। যে যা ভালোবাসে সেই জিনিশেরই আরাধনা করা উচিত তার। নিজের জীবনটাকে ভুল বুঝে মিছিমিছি অন্ধ হয়ে ঘুরে কী লাভ। দেশের বাড়িতে একটা মনিহারি দোকান খুলে বসবে সে –কিংবা দেশের ইস্কুলে একটা মাস্টারির চেষ্টা দেখবে— বিছানা-বাক্স বাধা হয়ে যাবার পর শরীরটা ভালো লাগতে লাগল; জুরটা যেন চলে গেছে। প্রভাতের চিন্তার গতি আবার অন্য পথ ধরল। চেয়ারে সে সুস্থির হয়ে চুপ করে বসল; একটা চুরট ধরে নাড়াচাড়া করতে লাগল—ভাবল; হুজুকে কোনো কাজ করা উচিত নয়। জীবন হচ্ছে লড়াইবাজ বাজপাখির বিশাল আকাশ এবং সংগ্রাম উচ্ছল, আশানীলাভ বিরাট পরিবিস্তৃত আকাশের মতো এই জীবন। যারা দুর্বল তারা শুধু—অনিয়ম দেখে—উচ্ছঙ্খলতা দেখে—তা নয়—তা নয়। চুরুটটা জুলিয়ে এক টান দিয়ে প্রভাতের মনে হল—জীবনকে হতবিধাতার আঁস্তাকুড় মনে করে চুপ করে থাকে যারা তাদের ক্লাস্তি, গ্লানি, বেদনা, সমস্তই নিজেদের তৈরি জিনিশ, তারা উপলব্ধি করতে ভয় পায়—জীবন্মত হয়ে থাকতে ভালোবাসে; অলসতাকে তারা ভাবে প্রেম—ভিক্ষাকে ভাবে দাক্ষিণ্য। মানুষের জীবনের আবহমান স্রোতের ভিতর যে সুন্দর নিয়ম আছে তাকে উপেক্ষা করে মাছির ডিমের মতো। এই সংসারে কোটি-কোটি জন্মায় তারা কোটি-কোটি গুড়িয়ে যায়— প্রভাত চুরুটে টান দিতেই ভাবল : পাঁচ বছর বসে প্রাণপাত করে—জীবনের সমস্ত অপচয় অপবিন্যাসের থেকে দূরে থেকে জীবনটাকে যেখানে এনে দাঁড় করিয়েছি আমি এ খুব ভরসার পথ। নীলমণিবাবুর ইস্কুলে চার মাস ধরে বেশ একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করেছি—কখনো কর্তব্য অবহেলা করি নি—বেশ সুনাম হয়েছে আমার—ছেলেরা খুশি—মাস্টাররা খুশি—সেক্রেটারি খুশি—হেডমাস্টারও বিমুখ নন— চুরুটের ছাই ঝেড়ে ফেলে প্রভাত স্বীকার করে নিল—কাজ পাকা হয়ে যাবে তার। বিছানা খুলতে-খুলতে ভাবল—পাকা হয়ে গেলে চল্লিশ টাকা মাইনে হবে—চল্লিশ টাকার একটা পাকা কাজ নিয়ে কলকাতায় বসে সে অন্য চেষ্টা করবে—হয়তো আরএকটা এম-এ দেবে—হয়তো থিসিস লিখবে—হয়তো বি-টি পড়বে— প্রভাত বিছানাটা পুরোপুরি খুলে পেতে নিল—বিছানায় শুয়ে শুয়ে সমস্ত দুপুর সমস্ত বিকাল সে ঢের উজ্জ্বলতায় ও জীবনের সুবিন্যাসের স্বপ্ন দেখল। সন্ধ্যার মুখোমুখিই জুর এল আবার— সংসারের বাজপাখি নয়, চড়ই পাখি—শালিখ পাখি এই উদাসী, করুণ, সংসারের কর্তব্য সংগ্রাম নিম্পেষিত যুবক ক্ৰমে-ক্রমে জুরে বেহুশ হয়ে পড়তে লাগল। খুব খিদে পেল। খোকার জন্য প্রায় সাত মাস আগে সেই যে কয়েকটা খুচরো বিস্কুট কিনেছিল বাক্সর থেকে সেগুলো বের করে নিল প্রভাত; গুনে দেখল পনেরো S\O&