পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনেক গল্প শোনা যাবে; গল্পের বিষয়ের চেয়ে শোনবার আগ্রহটুকুর দামই বেশি, খুকি নাকি অনেক কথা বলতে শিখেছে; টুক-টুক করে হাটতে পারে বেশ; মোটা আর হল না; সেই যে সূতিকা ঘরে যে চুল নিয়ে পৃথিবীতে নেমেছে মাথার থেকে এখনও তা কাটা হয় নি নাকি; আমি গিয়ে নাপিত ডেকে কাটিয়ে দিতে বলব। কিংবা নিজেই কাচি দিয়ে ছেটে দেব ও বলব, কি, তোমরা এত দিন ছাটো নি কেন ? কে জানে, সূতিকা ঘরের সেই সুন্দর নরম অপার্থিব চুলে আমিও কাচি লাগাতে পারব কি না। থাক, লাগাব না। খুবির পেটে না কি ঢের কৃমি জমেছে। শরীরও কৃমির মতোই রোগা। জুলানো যাক চুরুটটা— তারপর নীলিমা ? গতবার যখন আমি পাড়ায় ব্রিজ খেলতে যেতাম প্রথম দুই-তিন দিন সে কিছুতেই যেতে দেবে না আমাকে। শার্ট ধরে আটকে দিত। সারা দিন ব্রিজ খেলে সন্ধ্যার সময় যখন বাড়ি ফিরতাম আমার পথের থেকে সরে যেত, ডাকলেও উত্তর দিত না, শেষে গলা জড়িয়ে ধরে বলত, সারাদিন আমাকে একা ফেলে ছেড়ে থাকতে এত ভালো লাগে তোমার ? তাই তো ? ট্রেন এতদিন পরে এবার আমার দেশের দিকেই ছুটছে। না, এবার আর পাড়ায় গিয়ে ব্রিজ খেলতে যাব না দুপুরবেলা; এনু আছে, অমিয়া আছে, আমি আছি, আমার পিসতুতো ভাই, ভগ্নীপতি আছে। এদের ব্রিজ শিখিয়ে দেব। না যদি পারে বিন্তিই খেলা যাবে— পূর্বজন্মের স্মৃতির মতো বিন্তি খেলার ভিতরে একটা নরম করুণতা রয়েছে যেন—বিশেষত মেয়েদের সঙ্গে বসে যদি খেলা যায়, সমস্ত বা-বা খটখটে গরম দুপুরবেলাটা সেই দক্ষিণের ঘরে দিনান্তের নিন্ধরুণ আকন্দ ও ভেরেণ্ডার জঙ্গলের বাতাসের মুখোমুখি বসে। গতবার এই বিন্তি খেলার জন্য কত বায়না ধরেছিল সে; কিন্তু ব্রিজের চাড় ছিল ঢের বেশি আমার! কাজেই বাকি দুজন লোক জোগাড় করে আনতে বলে শার্টটা গায় দিয়ে খিড়কির দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতাম। এই উপেক্ষা ও প্রতারণার ব্যথা গত দেড় বছর মাদ্রাজে কাজ-আকাজের ভিতর কতবার জেগেছে। ট্রেন থেকে নেমে ঘোড়ার গাড়ি—ঘোড়ার গাড়ি আমাদের বাড়ির দুয়ারে এসে থামল। থামে; গাড়ির থেকে নামতেই একটা নেড়ি কুকুর আমাকে খেকিয়ে আসে। অবাক হয়ে ভাবি, কুকুরটা কোথেকে এল?’ পথের এক পাশ থেকে একটা ঝামা তুলতেই কুকুরটা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে योष-- মাদার গাছের নীচে গিয়ে আকাশ মাথায় করে কাদতে থাকে। আহা! এত করুণ তা! কেমন অস্বস্তি লাগে। বাড়ির দুয়ারে একটা গাড়ি থেমেছে বলেও ভিতর থেকে S 8 (t