পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘হ্যা।’ —‘কোনো ঔপন্যাসিকের তা নেই।’ —তবে কাদের আছে?”— টলস্টয়ের অবিশ্যি খানিকটা ছিল, কিন্তু তিনি তো নিছক ঔপন্যাসিক নন,মানুষের চরিত্রজ্ঞান যিনি এ চরিত্রগুলো সৃষ্টি করেছেন তারই শুধু আছে, আমরা পুতুলের চরিত্র জানি শুধু।” বাবা বইগুলো রেখে দিয়ে—‘প্রত্যেক লেখকই তার নিজের মনের পুতুলগুলো নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন—বলেন, এই মানুষের মনের ভিতর এই ভাব হয়েছিল, ওই নাড়ি দিয়ে প্রাণের ভিতর ওই রকম-রকম চিন্তার তিক্ততা কিংবা স্বপ্নসাধ জেগেছিল। যদি জিজ্ঞেস করি, কী করে তুমি জানলে ? এ তোমার নিজের মনের ভুল নয় ? আশ্চর্য। এ পৃথিবীতে কে কার কথা জানে। আমার অবিশ্যি মতোভেদ ছিল; কিন্তু প্রতিবাদ করতে গেলাম না। একটু চুপ থেকে—‘এই-ই যদি তুমি ভাব বাবা, তা হলে এই বইগুলো পড়ে কী লাভ— ?’ —“বেশ নিরপরাধ ভাবে খানিকটা সময় কাটে।’ —‘ভালো শতরঞ্জ খেলে যেমন ? বাবা মাথা নেড়ে—হ্যা, যে খেলাগুলো শিখলাম না কোনোদিনও; শিখলে মন্দ ছিল না ? একটু চুপ থেকে, ‘সে-সব খেলা শিখলে মোটামুটি এই সব নভেলই বেশি ভালো লাগত। উত্তেজনা আক্রোশ দরকার হয় না, হইচই নেই। ইস্কুলের ছেলেদের মাথামুণ্ডহীন ইংরেজি ঘাটার পর সাহেবদের এই সব নির্ভুল, নির্বিবাদ ইংরেজি পড়ে বেশ একটা নিস্তার পাওয়া যায়।’ মা চা নিয়ে এলেন। বললেন—মুড়ি খাবি?’ —“না।’ —‘রুটি নেই।’ —“থাক, —ভাবলাম দুটো পরটা করে দেই কিন্তু ঘি নেই, ময়দাও গেছে পচে—পোকায় ঘিনঘিন করছে, এখনই তো ভাত খাবে।’ —‘হ্যা।’ —তা চ খেয়ে নাও, মুখ ধোবে না ? —মুখ আমি ধুয়ে এসেছি।’ —“কোথেকে ?” —‘গাড়িতেই পাচটার সময় আমার ঘুম ভাঙল’, চায়ের পেয়ালাটা হাতে তুলে—‘একটা পাশের স্টেশন থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসেছি। বাবা খাতা দেখতে-দেখতে—‘এবার থার্ডক্লাসে এলে তুমি? —‘হ্যা।’ —“আমারও তাই মনে হচ্ছিল।’ একটা খাতা রেখে দিয়ে—"তোমার সে সব হোল্ড-অল সুইটকেসগুলোই-বা ১ 8 9