পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম—তিনি ঘাড় নিচু করে খাতা দেখছেন। বেখাপ্পা তর্কের হাত থেকে আমাকে বাচাবার কোনো চেষ্টা নেই তার, কিংবা তিনিও হয়তো মা-র মতোই ভাবছেন। চায়ের পেয়ালায় এক চুমুক দিয়ে—ইস, এই চা খাও নাকি তোমরা ? —‘কেন চায়ে কী হয়েছে? —যা হয়েছে তা হয়েছে—মুখ বিকৃত করে নাক-মুখ খিচে চায়ের পেয়ালা সরিয়ে রেখে দিতে হয়। —আমরা তো ছমাস ধরে এই চাই খাচ্ছি।’ —‘এ-গুলো কী, চা, না, শুকনো পাতা গুড়ো।’ বাবা—এখানে এই ই নিয়ম: আমরা খুব শাদাসিধে ভাবে থাকি, এই ই আমরা ভালোবাসি, মানুষের, বস্তুত জীবনেরও কোনো ক্ষতি হয় না এতে। মা—তা, এ চা তুমি খাবে না? -नों।' —‘একটুও না? —‘থাক।” —‘এক পেয়ালা চা নষ্ট করে ফেললে ?’ একটু চুপ থেকে—‘কাউকে দিয়ে দাও না।’ —‘কে খাবে ?” বাবা—‘এখন বেলা বাজে দশটা—এ সময় চা খাবার নিয়ম এ-বাড়ির আর কোনো লোকেরই নেই।’ একটু নিস্তব্ধ থেকে—‘ফেলে দিলেই হয়।’ —তাই বলছিলাম মিছিমিছি অপচয় হল। —অপচয় আর কী? আমাকে খাবার জন্য দেওয়া হয়েছিল, মনে করে আমি খেয়ে ফেলেছি।’ বাবা—“সে রকম মিথ্যে মনে করতে যাব কেন? তা তো সত্যি নয় ?” —“তা অবিশ্যি।’ মুখ তুলে হেসে—এটুকু চায়ের দাম কতই-বা? বড় জোর পাঁচ পয়সা; তোমাকে দিচ্ছি মা।’ বাবা—‘এটা পারিবারিক জীবন—দেনা-পাওনার জায়গা নয় তো? এখানে এরকম কথা তোমার শোভা পায় না।’ —“তা ঠিক।’ একটু চুপ থেকে—কিন্তু আমি— —‘না, কোনো কৈফিয়ৎ তো চাই নি তোমার কাছ থেকে।’ তবুও বললাম—একটু ঠাট্টা করে বলেছিলাম মাকে। বাবা একটু হেসে—“তা বেশ, বেশ; কিন্তু কেমন একটা অসংযম দেখা যায় আজকালকার যুবকদের মধ্যে। তারা যদি পাঁচ পয়সা রোজগার করে তা হলে মনে করে বসে জীবনের সব জিনিশই পয়সা দিয়ে কেনা যায় বুঝি? তা যায় না। শেষ পর্যন্ত পয়সার দাম ঢের কম। বাবা চলে গেলেন। খানিকক্ষণ চুপচাপ। Ꮌ ©