পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—“বেকুবের মতো মাথা নাড়ছ; আনলে না তো’। জানলার পাশ থেকে একটা লেবুপাতা ছিড়ে নিলাম। . . . —আজকাল কত নতুন রেকর্ড বেরিয়ে গেছে।’ —‘পাড়ায় কারো গ্রামোফোন আছে ? —“তা দিয়ে তোমার কী হবে ? —দু-তিনদিন এনে শোনা যেত। —তা তুমি এনে শুনতে পার; কিন্তু ও-রকম করে গান শোনবার লোভ আমার নেই। লোকে তো সাতশো টাকা দিয়েও গ্রামোফোন কেনে। একটা দেড়শো টাকা দামের জিনিশ। এই জন্য যাব আমি পাড়ার লোকের কাছে চাইতে ? সববাই জানে যে মাদ্রাজে তুমি হাজার-হাজার টাকার ব্যবসা করছ।” —না, পরের জিনিশ চেয়ে ফুর্তি করার পক্ষপাতী আমিও বড় একটা নই। l’ —অনাড়ম্বর নিম্পূহ জীবনও তাদের চেয়ে ঢের ভালো।’ —“তা ঠিক।’ দুজনেই কিছুক্ষণ নীরব রইলাম। —‘বড় তো বললে জীবনটাকে সাজাচ্ছ। কিন্তু এই চার বছরের মধ্যেও এই খড়ের ঘরদোরের জীর্ণশীর্ণতা ঘুচল না। পশ্চিমে একটা দালান তুলতে বলেছিলে, তার ইটের পাজ এখনো পুড়ছে হয়তো? একটা নিশ্বাস ফেলে, “সে রাবণের চিতার মতো চিরকালই পুড়বে। একটু হেসে, “দেখো না, কী হয়।’ ঈষৎ ঔজ্জ্বল্যে চোখ তুলে, জায়গা কেনা হয়ে গেছে ? মাথা নেড়ে, না, কোথায় কিনব ভাবছি।’ —“ভাবছ ? তা ভেবেই যাদের মনখালাশ মিছিমিছি কষ্ট করে কিনবার প্রয়োজনই-বা কী তাদের ? জীবনের শেষ পর্যন্ত মনের নিরবচ্ছিন্ন ভাবনা নিয়ে বেশ বিলাসেই তো দিনরাত কেটে যাবে। জাবর কেটে চোখ বুজে লেজ নেড়ে ? —ভাবছি মুঙ্গেরে কিনব, না আরো পশ্চিমে যাব—ধরো দেরাদুনে।’ — l’ —না, কথাটা হচ্ছে কী জানো’ —‘মিছিমিছি কথার অপব্যবহার করে জাহাজ বানিয়ে কী লাভ। একটু চুপ থেকে বললে—“আমাদের বিয়ের পর থেকেই বলে আসছ মানুষের জীবনটা একটা শ্রীছাদের জিনিশ। এখানকার গরু-ছাগলের খোয়াড়ের দিকেও তো একটু তাকাতে হয়।’ —“তা আমি ভেবেছি।’ —“সেই বিয়ের থেকেই আমাকে শোনালে মানুষের জীবন খুব একটা সুন্দর রচনার জিনিশ। তা আজ অবধি একটা কোঠা বাড়ি হল না, গ্রামোফোন নেই, অর্গান নেই, সেলাইয়ের কল নেই, মেহগিনি কাঠের চেয়ার, টেবিল, দেরাজ নেই, ছাপার খাট নেই, ঝালর বাতি নেই, একটা সেলাইয়ের কল অব্দি নেই।’ —“তুমি বড্ড রোগা হয়ে গেছ এ দেড়বছরে। Ꮌ ©Ꮤ%