পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু, এই উপন্যাসটিতে উপন্যাস ও আত্মজীবনের মধ্যে তেমন কোনো আড়াল যে নেই তারই যেন আরো আভাস মেলে, সেই সব অংশে, যেখানে জীবনানন্দের কয়েক লাইন লিখে ফেলেন। (২৬ পৃষ্ঠা থেকে ২৮ পৃষ্ঠায় প্রথম—তার পরেও মাঝেমাঝেই)। 'বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের কুড়ি বছর পরে’, নগ্ন নির্জন হাত’, ‘অন্ধকার’—এই কবিতাগুলির কোনো-কোনো কল্পনার আসা-যাওয়া এই উপন্যাসেই প্রথম দেখা গেল। ১৯৩৪-এর এই কবিতাগুলি পাণ্ডুলিপিতে চিহ্নিত করা যায়, উপন্যাসটি ১৯৩৩-এ লেখা। কিন্তু জীবনানন্দের জীবন ও কাব্যের অন্বয়ে ১৯৩৩-এ লেখা এই উপন্যাসটির গুরুত্ব প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে চায় বনলতা’-র প্রথম উল্লেখে। ১৯৩৪ বলে চিহ্নিত কবিতার সেই খাতাটিতে বেশ কয়েকটি পৃষ্ঠা সযত্নে কাটা। তারই একটিতে ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি ছিল। একটি পাতায় কবির নিজের ཧྥུ་ ཧྥུ་ཐ་ཨ་ཤཁ་ཕའི་མ། ༡༧་ལྟ་ লেখা—”কবিতা’ পত্রিকায় পৌষ সংখ্যায় প্রকাশের উল্লেখ। পরে, তার কাগজপত্রের ভিতরে ঠিক এই কটি পৃষ্ঠা এক সঙ্গে গাথা পেয়েছি। কিন্তু, এখন এখানে, বনলতার সেই আপাত আদি উল্লেখেরও আগে, এই ১৯৩৩ এর খাতাটির এই উপন্যাসেই এখন পর্যন্ত বনলতা’ নাম ও প্রতিমার প্রথম উচ্চারণ পাওয়া গেল। কবিতাটির আগেই বনলতা এই উপন্যাসে স্মৃতিনির্মিত নায়িকা। চারিদিকে তাকিয়ে দেখি শুধু মৌসুমির কাজলঢালা ছায়া। কিশোরবেলায় যে কালোমেয়েটিকে ভালোবেসেছিলাম কোনো এক বসত্তের ভোরে, বিশ বছর আগে যে আমাদেরই আঙিনার নিকটবর্তিনী ছিল, বহুদিন যাকে হারিয়েছি—আজ, সেই যেন পূর্ণ যৌবনে উত্তর আকাশে দিগঙ্গনা সেজে এসেছে। দক্ষিণ আকাশে সেই যেন দিগবালিকা, পশ্চিম আকাশেও সেই বিগত জীবনের কৃষ্ণামণি, পূব আকাশ ঘিরে তারই নিটোল কালো মুখ। নক্ষত্রমাখা রাত্রির কাল দিঘির জলে চিতল হরিণীর প্রতিবিম্বের মতো রাপ তার—প্রিয় পরিত্যক্ত মৌনমুখী চমরীর মতো অপরাপ রাপ। মিষ্টি ক্লান্ত অশ্রুমাখা চোখ, নগ্ন শীতল নিরাবরণ দুখানা হাত, স্নান ঠোট, পৃথিবীর নবীন জীবন ও নবলোকের হাতে প্রেম, বিচ্ছেদ ও বেদনার সেই পুরোনো পল্লীর দিনগুলো সমপর্ণ পরে কোন দূর নিঃস্বাদ নিঃসূর্য অভিমানহীন মৃত্যুর উদ্দেশ্যে তার যাত্রা। সেই বনলতা—আমাদের পাশের বাড়িতে থাকত সে। কুড়ি-বাইশ বছরের আগের সে এক পৃথিবীতে; বছর আষ্টেক আগে বনলতা একবার এসেছিল। দক্ষিণের ঘরের বারান্দায় দাড়িয়ে চালের বাতায় হাত দিয়ে মা ও পিসিমার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললে সে। তার পর আঁচলে ঠোট ঢেকে আমার ঘরের দিকেই আসছিল। কিন্তু কেন যেন অন্যমনস্ক নত মুখে মাঝ পথে গেল থেমে, তার পর খিড়কির পুকুরের কিনারা দিয়ে, শামুক গুগলি পায়ে মাড়িয়ে, বাঁশের জঙ্গলের ছায়ার ভিতর দিয়ে চলে গেল সে। নিবিড় জামরুল গাছটার নীচে একবার দাঁড়াল, তার পর পৌষের অন্ধকারের ভিতর অদৃশ্য হয়ে গেল। তার পর তাকে আর আমি দেখি নি। অনেক দিন পরে আজ আবার সে এল; মন পবনের নৌকায় চড়ে, নীলাম্বরী শাড়ি S ૧૧