পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হ্যা ফাল হয়ে বেরোলাম ইনস্পেক্টর। গলা খাকরে মেজকাকা—ব্রাহ্ম সমাজের সাধনাশ্রমের সঙ্গে খুব যোগ [ ? ] ছিল এক সময় আমার—’ ছিল বুঝি ? ভেবেছিলাম জীবনটা ওইখানেই কাটিয়ে দি, কিন্তু, শাদা গোফে হাত বুলিয়ে বললেন, মানুষের জীবনের কত রূপান্তর হয়, ভাবছিলাম এই সমাজের বেদিতে চড়ি-চড়ি বুঝি, কিন্তু বছর দুয়ের মধ্যেই আবগারির মোটা তলব।’ শক্তি যেখানে যায়, সেখানেই কাজে লাগে।’ তা বইকি, তোমার বাবারই তো শুধু কিছু হল না। চিরটা জীবন ইস্কুল মাস্টারি করে কাটালেন; শক্তি আমাদের কারো চাইতে কম ছিল কি তার ? গলা খাকরে মেজকাকা—‘এই তো তিনদিন হল তোমাদের এখানে এসেছি, পরশুই আবার কলকাতায় চলে যাব।’ ‘পরশুই যাবেন ? জরুর, যতবার এখানে আসি, দেখি, কী দুরবস্থার ভিতরেই তোমরা আছ। বাহাত্তর বছর বয়সে দাদা কাদা-বৃষ্টি ভেঙে এখনো হেঁটে এক মাইল দূরের ইস্কুলে যান, তোমার মা চাকরানীর মতো খাটে—তোমার চাকরি নেই—বৌমার কষ্ট; নিজেকেও ধিক্কার দি এই ভেবে যে তোমাদের কোনোদিন একটি পয়সা সাহায্য করতে পারলাম না। যতদিন সার্ভিসে ছিলাম মেরে-কেটে কিছু সাহায্য করলেও করতে পারতাম। সেই বড় ভুল হয়ে গেছে, কিছু দেওয়া-থোওয়া উচিত ছিল দাদাকে তখন। কিন্তু এখন পেনশন খাচ্ছি, কোনো উপায় নেই তো।” "আপনার কত পেনশন মেজকাকা ?” ‘পেনশন আর-কী ?’ দেশলাইটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলাম। মেজকাকা—আমাদের খোঁজখবর তোমরা কিছুই রাখো না দেখছি। ঈষৎ হেসে কাকার দিকে তাকালাম। ન’ পেনশন তাও জিজ্ঞেস করলে ? জানো না কী নিদারুণ টানাটানির ভেতর I’ বলে খাকির হাফ প্যান্টের ভিতর দুহাত চালিয়ে দিয়ে, ‘এক জোড়া জুতো কিনতে পারছি না।’

  • কেন ?"

‘পায়ে লাগে। দাদা যখন কলেজে পড়তেন তখনো, এখনো, নিউ কাট [ ? ] কিন্তু আমার অক্সফোর্ড না হলে চলে না', একটা হাত তুলে বললেন। জুতোর ? হ্যা, হ্যা, সোল কী রকম হওয়া চাই জানো ? ‘কী রকম?” কাকা । বললাম—“বেশ।" খুব অস্বস্তির সঙ্গে—মেজকাকা, ক-দিন টেকে?’ ૨8