পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গাড়োয়ানেরা কান মলে পয়সা আদায় করে নেয়।’ ‘কোথায় গিয়েছিলেন ?” ‘এলাম নদীর ধার দিয়ে একটু বেড়িয়ে। কাহাতক ঘরে বসে থাকা যায় ? তা বেশ, ঝাউয়ের বাতাস কেমন লাগল ?’ পাহাড়ে, পাইনের বনে। অনেকে আমরা স্তম্ভিত হয়ে মেজকাকার দিকে তাকাই ! ‘গত এপ্রিলে গিয়েছিলাম—’ ‘কোথায়? আলমোড়ায় ? আলমোড়া, মুসুরি, দেরাদুন। এ বাড়ির কোনোদিন কেউ এ সব দেখে নি আর। দেখবেও না কোনোদিন। বাবা একটু বিস্মিত হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কোনো এক বিরাট শাদা মেঘখণ্ডের সৌন্দর্যের ভিতর দিয়ে দূরত্বের সৌন্দর্য ও বিস্ময়কে উপলব্ধি করতে চেষ্টা করেন। ‘প্রায় সাড়ে বারোশো টাকা খসে পড়ল—” বাবা চমকে উঠে তাকালেন মেজকাকার দিকে। তা কুমায়ুনের পাহাড়ে-পাহাড়ে হোটেলে-হোটেলে থাকব, টাকা খরচ হবে না? পিসিমা ফোড়ন দিয়ে, টাকা তো মেজদা নিজেই উপার্জন করেন, কারু কাছ থেকে হাত পেতে নিতে হয় না তো’। মেজকাকা আত্মপ্রসাদের অহঙ্কারে পিসিমার দিকে একবার তাকান, আমাদের সকলের দিকে একবার। বললেন—‘নিয়েছি সেকেন্ড ক্লাস রিজার্ভ করে।’ ‘কেন ফাস্ট ক্লাস রিজার্ভ করে গেলেন না মেজদা ? পিসিমা বললেন। যাঃ যাঃ! আমি কি রমেশটার মতো বেল্লিক যে ঘুঘু সিভিলিয়ানরা যা করতে ভয় পায় আমি তাই করে বসব।' গোফে হাত বুলিয়ে নিয়ে মেজকাকা—‘মালতী গেল, মালতীর মা গেলেন, বিজয় গেল, একটা বেয়ারাকেও সঙ্গে নিতে হল—” আহা, যদি পাশ পেতেন মেজকাকা, আপনার এত টাকা খসল!' ‘দেখো, তোমরা এই দরিদ্রতার ভিতর কায়ক্লেশে থেকে-থেকে বড় প্রবঞ্চিত হয়েছ, মানুষের আত্মাকেই ফেলেছ হারিয়ে; তোমরা ভাব টাকাই সব; কিন্তু সৌন্দর্য ও ভগবানের জন্য আমাদের তেমন পিপাসা থাকলে ডাঙা দিয়ে তিনি যে আমাদের নৌকা চালিয়ে নিতে পারেন তা তোমরা জানো ?’ বাবা এই পর্যন্তও বৈঠকে ছিলেন; এবার আস্তে চোখ বুজে নিজের ঘরে গিয়ে উঠলেন; তাকিয়ে দেখলাম একটা টুলে বসে ইস্কুলের ছেলেদের খাতা দেখছেন নিবিষ্ট একান্ত মনে, যেন কোনো বাধা, কোনো পরাজয়, কোনো দীনতার কুয়াশা কোনোদিনও ছিল না জীবনে। . মেজকাকা—‘কুমায়ুনে গিয়ে ভগবানের সত্যকে আমি বিশেষভাবে উপলব্ধি করে আসতে পেরেছি।’ মা বললেন, কুমায়ুনে কেন, এখানে বসে পারা যায় না? যেমন কুমায়ুনে তেমন এখানে বসেও পারা যায়।’ সব সময়েই জীবনের জীর্ণতার ছোট নজরের কথা বলো না বউঠান। ২৯