পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাবা—“তুমিই বলো, সেটাই ভালো হবে; জানো তো এ সব বিষয় নিয়ে আমি কোনোদিন কথাবার্তা বলি না কারু সঙ্গে। . দক্ষিণের ঘরে গেলাম; কাকা চা খাচ্ছিলেন। কাগজওয়ালা রাস্তা দিয়ে হেকে যাচ্ছিল—একটা ‘এ্যাডভান্স’ রেখে কাকাকে, পড়বেন ? হাত বাড়িয়ে কাগজ তুলে নিয়ে—’বেশ, পড়তে আমার আপত্তি নেই; খবর না পেয়ে কত দিন মনে হচ্ছিল । অন্ধকারে | পড়ে আছি। তোমরা এরকম জেলখানায় কী করে থাক, বলো তো ?’ একটু হেসে, আমি ফ্রি রিডিং রুম-এর থেকে নিয়ে পড়ে আসি। আর তোমার বাবা ?” তিনি কাগজপত্র বড় একটা পড়েন না।’ মনে-মনে ভাবেন বুঝি কাগজের ভিতর বলাৎকারের গল্প ছাড়া আর-কিছু নেই? চশমাটা, এটাচিকেসে, দেখতে পারছি না, এটা কী কাগজ রাখলে তুমি? ‘এ্যাডভান্স’ আনন্দবাজার বিক্রি হয় না এখানে ? ‘হয়’ তাই তো রাখলে হত, কিংবা স্টেটসম্যান, বাসি দুধে চা করা হয়েছে বুঝি ? কই না তো।” তা হবে, বাসি দুধেই করে দিয়েছেন বোধ করি। বউঠান তো ঠাকুরপোর জন্য টাটকা দুধ-দুধ বলে খুব দহরম-মহরম করছিল।’ মা রান্না ঘর থেকে, টাটকা দুধে করা হয়েছে। মেজকাকা—“বেশ, আমি রাজা হয়ে গেছি।’ পিসিমা—হবে; এটুকুর জন্য বউঠান কি আর বাড়িয়ে কথা বলবে? তবে তোমাকে বলি কি মেজদা, এরা দুধ জাল দিতে জানে না। আঁচ পাকতে দেয় না, কাচা আঁচে চড়িয়ে সমস্ত দুধ ধোয়ায় নষ্ট করে ফেলে।’ মরি, চায়ের পেয়ালাটারই বা বাহার কত। ‘দাদা কিনেছিলেন; মোক্তারের পছন্দ।’ কাগজটা তুলে নিলাম। মেজকাকা—তা পড়বে? তুমিই পড়ে— —আপনি পড়বেন ? —‘না, খেতে-খেতে পড়তে পারি না আমি।” দু-চার মিনিট নেড়েচেড়ে কাগজটা রেখে দিয়ে বললাম, বাবা বলছিলেন— ‘কী বলছিলেন ?? আমার জন্য চাকরি-বাকরির ব্যবস্থা কোথাও করে দিতে পারেন? একটু চুপ থেকে মেজকাকা, দাদা আমাকে নিজে এসে বললেই পারতেন— —উনি এসব বিষয়ে কাউকে বলেন না বড় একটা—’ —র্তাবেদার পাঠিয়ে দিলেন তোমাকে; ছেলের দায় যে বাপেরই দায়—তা জানো, আমি আর রমেশ, কক্ষনো ছেলেদের পাঠিয়ে দেই না। মুরুবিবদের কাছে গিয়ে নিজেই র্তাবেদারি করি। এই তো সংসারের নিয়ম। চায়ে এক চুমুক দিয়ে, দাদা চিরটা কাল ফাকি দিয়েই গেলেন। \S)8