পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নষ্ট করে বোসো না, উত্তেজিত হয়ে সময়ে-অসময়ে ফুটপথে ঘুরে মরো না; কাজকর্মহীন লোকের পক্ষে কলকাতা থাকা একটা বিড়ম্বনা। ফ্যাকরা হচ্ছে এই যে চারদিকের প্রকৃত পথ ভুলে যায়, আগুনের মুখে দেওয়ালি পোকার মতো জীবনের যথার্থ সম্ভাবনাগুলোকে বারংবার অন্ধভাবে নষ্ট করে ফেলে। নিজের শক্তি ও রুচির পরিমাপ খুব গভীর ভাবে বিচার করে ঠিক করে নিও। নিজেকে যে-পথের উপযুক্ত মনে করো বস্তুনিষ্ঠ হয়ে সেই পথেই চলো। জীবনে আশা, আশাভঙ্গ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও পরিণামের হিশেবে অবঞ্চিত থেকে সূর্যের আলোয় বিশ্বাস করে অগ্রসর হয়ো। রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর বাবাকে আমি বললাম—দেখেছ বাবা, কী রকম বৃষ্টি পড়ছে!’ —‘হ্যা’ —“দেশের এই বর্ষাকে জীবনের সত্তর বছর বসেই তো দেখলে।’ —“দেখলাম।” —‘পাড়াগায়ের এই বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে, বিশেষত এমনি রাতের বেলা। —“বেশ জিনিশ ?” মনে-মনে ভাবলাম, এই রাত আর বর্ষা যদি চিরকাল থাকত। এই বাশের জঙ্গলের বাতাস, ঘরের পাশের লেবু পাতার থেকে ছুপ-ছুপ জলের শব্দ, মাঠেমাঠে ব্যাঙের কোলাহল, জাম, তেতুল ও কাঠালের ঠাণ্ডা ডালপালার অবিরাম শব্দ, কোনো তিমিরচারিণীদের সঙ্গে মাঝে-মাঝে প্রেতজীবনের প্রতিধ্বনির মতো দু-তিনটি দাঁড়কাকের অবশ বিহুল কলরব। —“তুমি শুয়ে পড়েছ বাবা ? -नीं' —‘কী করছ?” —না, একটু আলো জুলিয়ে পড়ছি। —রাতের বেলা পড়ো না, তোমার তো ক্যাটারেক্ট।’ বাবা একটু হেসে, তেমন সিরিয়াস ক্যাটারেক্ট তো নয়। ভগবান শিগগির অন্ধ করবেন বলে মনে হয় না। একটু চুপ থেকে—‘এই রাতের আলোতে চোখে তেমন খোচা লাগে না তো? আরো খানিকক্ষণ চুপ থেকে, অবশ্য নীল চশমাটা পরেছি, চোখে বেশ আরাম লাগে।” নীল চশমাটা অবিশ্যি সামান্য একটা এক টাকা দামের বাজারের জিনিশ। দাড়িয়ে—আহা, অনেক বিরহের পরে যেন এই মাঠঘাট, আম-কাঠালের জঙ্গল, এই করুণার সমুদ্রকে পেয়েছে।’ চিমসে রোগা চেহারা—জরাজীর্ণ চোয়াল, গাল, হাত-পা, ত্বক। জানলার কাছে দাড়িয়েছ, ঠাণ্ডা লাগবে তো তোমার।’ বললেন—জানলা বন্ধ করে দেব ?’ 8bア