পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বুঝি ? মনে-মনে ভাবছিলাম, অলস নিষ্কৰ্মা লোক, সংসারের পথ থেকে যে ভয় পেয়ে ফিরে এসেছে, এ রাতগুলো তার পক্ষে কী যে পরম সুন্দর আশ্রয়ের জিনিশ। জেগে থেকে স্বপ্ন দেখা যায়। যা পাওয়ার জন্য সারা জীবন মিছিমিছি পথে ঘুরেছি, হাতের কাছে কুড়িয়ে পাই—বেঁচে থেকে, বিছানায় শুয়ে, গড়িয়ে উদ্দেশ্যহীন বিড়ম্বনাহীন রহস্যের আস্বাদ ভোগ করি—কী যে অপরূপ। লাগছে আমার; চারদিকে এই আম-কঁঠাল-লেবুর বন, জঙ্গল-মাঠ নিস্তব্ধতা, বিশেষ করে, এই আষাঢ়-শ্রাবণের রাতে, এর মায়া কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারা যায় না যেন ? —তা আমি বুঝি— বাবা—‘এখনই-বা কলকাতা যাবার এত কী তাড়া তোমার ? কোনো উত্তর দিলাম না। —কিছুকাল থাকো এখানে, ভাদ্রমাসে যেও, কিংবা পুজোর পরে। মাথা নেড়ে—না—অনেক দিন দেশে থাকলাম তো, কল্যাণীকে বলেছিলাম চার-পাচ দিন থাকব, প্রায় পাঁচ মাস কাবার করে দিলাম। এখন তার মুখের দিকে তাকাতেই ভয় করে। বেচারি আমার ভালোর জন্যই আমার উপর রাগ করে।’ —ভাবে যে কোনোরকমে তোমাকে কলকাতায় পাঠালেই হল ?’ —‘হ্যা। তারপর চাকরি আমাকে খুঁজে নেবেই।’ —বহুদিন কলকাতা দেখি না, কে কোথায় বলতে পারো ?” —না তো? —আর বনলতার বাবা সেই কেদারবাবু—আচ্ছা এমন বন্ধু কি মানুষের এক জীবনের তপস্যায় জোটে? চল্লিশটা বছর পাশাপাশি আমরা কাটালাম। লম্বা-চওড়া চেহারা, মাটির মতো মন, কত ক্ষণে-অক্ষণে আমার কাছে এসে বসেছেন। এমনি বৃষ্টির রাতেও কত গভীর রাত পর্যন্ত মুখোমুখি বসে আমরা আলাপ করেছি কিংবা চুপচাপ বসে রয়েছি। একটু চুপ থেকে—আর বনলতা ?’ আমার দিকে তাকিয়ে, মনে হয় তার কথা তোমার ?” কোনো উত্তর দিলাম না। —না। ভুলেই গেছ হয়তো।” খানিকক্ষণ নিস্তব্ধতার পর বললেন, কিন্তু। কিন্তু, এই বলেই চুপ করলেন, কথাটা বাবা আর শেষ করলেন না। বললেন—'খুকি দুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিল ?’ —‘কী জানি ?” —ওর মা-র আবার এদিকে দৃষ্টি নেই একটুও। —দুধ না-খেলে কেঁদেই উঠবে। —“সে তো অনেক রাতে।” —‘মেয়ে কাদলে ওর মা বড্ড বিরক্ত হয়— মাঝে-মাঝে পাখার ডাঁট দিয়েও মারে। আমিই গিয়ে দুধ খাইয়ে আসব।' (2O