পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঙ্গে আমার বিছানায় চলে আসে সে। মশারি তুলে ফেলি, পাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকি, এতক্ষণে, আরামে, রুগণ অবিশ্বাসী মুখে, খানিকটা ভরসা আসে তার। কৃতজ্ঞতার আলোকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে, তারপর একটু হাসে। হাসি মুহূর্তের মধ্যেই নিভে যায়, চোখ কেমন অসাড় ব্যথিত হয়ে আসে। বুঝি, বিছানা ভিজিয়ে দিয়েছে সে। হাত বুলিয়ে দেখি হ্যা, ভিজিয়েই দিয়েছে সে অনেকখানি জায়গা। বলি—“বেশ করেছ, ভয় পাচ্ছিস কেন ? কিন্তু তবুও মুখ-চোখের বিবর্ণতা কাটে না। —"বিছানা ভিজিয়ে দিলে মা তোমাকে মারে ?’ কোনো উত্তর দেয় না। —‘পাখার ডাঁট দিয়ে পেটায় ?” নিশ্চপ, নিঃসাড়; সলতের মতো হাত দুখানা তুলে নেই, সমস্ত গায়ে-পিঠে হাত বুলাই, মিঠাইয়ের দোকানের খানিকটা বাসি পরিত্যক্ত ময়দার মতো যেন, কারা যেন পিষতে-পিষতে ফেলে দিয়ে চলে গেছে। হাত-পা-আঙুল কালিয়ে গেছে; কপালচুল ঘামে ভিজে গিয়েছে। দাঁড়কাকের ঘাড়ের ভিজে রোমের মতো কতকগুলো কালো পাতলা চুল। ভিজে ইজেরটা খুলে ফেলে দি। বলি—‘খুকি, মারব তোমাকে? চুপ করে থাকে। —‘পাখা দিয়ে লাগাই এক ঘা ?’ মাথা নেড়ে নিষেধ করে। —তবে আমার বিছানা ভিজিয়ে দিলে কেন ? মারি ? পাখার ডাট তুলে ধরি। শিশুর হৃদয়ে কোনো ভাব খেলা করে বিদীর্ণ মুখে বড় একটা ফুটে ওঠে না। পাখার উাটের দিকে একবার তাকায়, আমার মুখের দিকে একবার তাকায়, কপাল ও ভুরুর সরলতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, ঠোট নড়ে, বেতফলের মতো চোখ তুলে চালের বাতার দিকে নিগৃঢ়ভাবে তাকিয়ে থাকে। —মা-র কাছে নিয়ে যাব ? সহসা কোনো উত্তর দেয় না। —মা-র কাছে যাবি?’ -नां ।।' —‘এইখানে থাকবি ? -ईjा।' —তাহলে একটু সরে শেও। খানিকটা সরে যায়। —"বালিশ লাগবে না ?” মাথা নেড়ে না’ বলে। —ভিজের উপর শুলি যে— কিন্তু ভিজে জায়গায় শুতে কোনো আপত্তি নেই বেচারির, কোনোরকমে শাস্তিতে, নিস্তব্ধতায় রাতটা কাটিয়ে দিতে চায় হয়তো, হয়তো ভবিষ্যতে জীবনটাও এই রকম ভাবেই কাটাতে চাইবে সে, ভবিষ্যৎও কী যে নিগুঢ় ? (2°C)