পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করতে হবে? যে-সন্তান পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে সকলের মনে সন্দিগ্ধতা সৃষ্টি করে, জননীর মন দেয় নিরাশায় ভরে—অন্ধ চোখ নিয়ে যে পৃথিবীতে নেমেছে, কিংবা কথা কইবার শক্তি যে সঙ্গে করে আনতে পারে নি, কিংবা শুনবার, বুঝবার, গ্রহণ করবার শক্তিকে যে কোনো দূরান্তের পথে রেখে এসেছে, কিংবা যার দেহের নিজীবতা কাদাখোচার ছায়ার মতো, চড়াইয়ের মতো, হেমন্তের বিকেলে শুকনো পাতার রাশের ভিতর বালি-হাসের বিবর্ণ ডিমের মতো, পৃথিবীর হৃদয় যেন তাদের সম্বন্ধে নিজেকে সময়ে-অসময়ে অবারিত ভাবে ব্যয় করতে কেন এমন কুষ্ঠিত হয়? আনন্দ-উৎসবই কি জীবনের সবচেয়ে বড় কথা? সহানুভূতি— তাকিয়ে দেখলাম খুকু জেগে আছে। —‘কী ভাবছিস রে’ কোনো উত্তর দিল না। —'খাবি কিছু? —‘গুড ?” আকাঙ্ক্ষা খুব সাধারণ। এর চেয়ে ভালো জিনিশের কল্পনা এর জগতে নেই। —‘চকোলেট খাবি রে ?’ চুপ করে রইল। চকোলেট কী জানে না অবিশ্যি— —‘টফি ?’ এবারও নিস্তব্ধ; ভাবলে, ঠাট্টা করছি। —‘কী খাবি রে?” কোথার থেকে একটা গঙ্গাফড়িং, তেলাপোকা, চামচিকা, ফডফড় করে উড়ে এল—ঘরের ভিতর ক্লান্তিহীন ভাবে ঘুরতে লাগল। চামচিকাটার দিকে তাকিয়ে চোখ ধীরে-ধীরে ভারী হয়ে এল মেয়েটির; ঘুমিয়ে পড়ছিল, একটা মৃদু বাকুনি দিয়ে জাগিয়ে দিলাম। —‘গুড় খাবি না রে?” —‘কই? উঠে বসে হাত পেতে বললে। ধীরে-ধীরে আস্তে-আস্তে শুইয়ে দিয়ে মাথায় আস্তে-আস্তে হাত বুলুতে লাগলাম—‘গুড় কাল সকালে খাবে; কেমন? —আচ্ছা।’ —নিলেন গুড় না? —‘হ্যা।’ অন্যমনস্ক হয়ে অবাস্তব কথা ভাবছিলাম, কিছুক্ষণ পর ফিরে তাকিয়ে দেখলাম ঘুমিয়ে যাচ্ছে। আরো দু-তিন দিন কেটে গেছে। সকাল বেলা, বাবা ইস্কুলের ছেলেদের খাতা দেখছিলেন। ছোট্ট-ছোট্ট টেবিলে বই, ডিকশনারি খাতাপত্র, দোয়াতকালির স্তুপ— 인