পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—না, সে বেশ চালাক আছে।’ —‘গায়ে-পায়ে কাজ করতে পারবে বেশ ? —তা ফুর্তিসে সকাল থেকেই তো কাজে লেগে গেছে।’ —“বেশ।" —'মেজদার গা টিপছে সেই সকাল থেকে।" —সুরেশের গাউট বাড়ল না কি আরো ? —“বাড়েও নি কমেও নি—যেমন ছিল তেমনি আছে তবে না-টিপলে কষ্ট লাগে।’ —“দেখো, চাকরটা যেন বেশ মোলায়েম ভাবে টিপতে পারে, আর হাত, পা, ঘাড় টিপবার আগে কখনো যেন তামাক না খায়।’ —'মেজদা চেয়েছিলেন জমিদারি স্টেটে ম্যানেজারি করতে, ঢের বড়-বড় চাকরি পেয়েছিলেন—আমি বললাম, থাকরে বাপু, হাতে-পায়ে এত, বয়সও তো কম নয়, তোমার এখন সেবা শ্রদ্ধা পাবার বয়স, সুস্থিরে বসে ভগবানের সান্নিধ্যে থাকবে, মানুষকে ধর্ম উপদেশ দেবে, পথ দেখাবে, এই আর-কী।’ মা বললে, হরিচরণকে তিনবেলা খাবার দিতে হবে! হ্যা, তিনবেলা ভাত দেব কড়ারে নিয়েছি, সুরেশবাবু আচ্ছা ছেলেমানুষ। —'খাবে তো। না হলে কাহিল শরীরে কী কাজ করবে ?’ বাবা শাদা গোফে হাত বুলিয়ে—যা খেতে পারে, খাবে। একটু গলা খাকরে—মানুষ তো ক্ষিধের অতিরিক্ত কিছু খায় না।’ মা একটু চিন্তিত ভাবে—তিনবেলা একজন চাকরের অন্তত দেড়সের চালের ভাত লাগবে।" —লাগলে লাগবে ? এ নিয়ে তুমি ভাবছ কেন বড়বউ। —‘না, টেনে-হিঁচড়ে সংসার চলছে কিনা।’ —তা, আমি না হয় বলব মেজদাকে চালের টাকাটা দিতে। এক টাকা করে তো চালের মণ।” মা তাড়াতাড়ি পিসিমার মুখে হাত চাপা দিয়ে—'খবরদার, এমন কাজও করো না ঠাকুরঝি। —‘দাদা বললে অবশ্য মেজদাকে গিয়ে লাগাতাম; তোমার কথার কী-আর মূল্য বউঠান; তুমি তো বাজারের ঘটি-বাটি।’ খানিক দূর গিয়ে পিসিমা ফিরে এসে বাবার দিকে তাকিয়ে—আমি কিন্তু মেজদার সঙ্গে কলকাতায় যাব।’ —তা একবার গিয়ে বেড়িয়ে এলে—বেশ তো, —‘বেড়িয়ে আসা শুধু নয়।’ —তবে ?” —‘পুজোর সময় আমাকে আনবার জন্য হেমকে যদি পাঠাও তাহলে আমি আসব না।’ —"কেন ?" —‘চালের দর নিয়ে যারা কষাকষি করে সে-সব চামারের বাড়ি আমি থাকি না।’ “ል 8