পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘বেশ তাই রেখো, যার যাতে তৃপ্তি হয় তার থেকে তাকে বঞ্চিত করে লাভ নেই তো কিছু। পিসিমা—'কাপড়-কাচা সাবানের জন্য কিছু পয়সা দেবেন? —‘এক সের সাবান ?? —হ্যা, ধরুন, আড়াই সের আন্দাজ।” —চাবি তো ওর কাছে। বলো গিয়ে, যত পয়সা লাগে দেবেন। বাবা গুন-গুন করে গাইতে-গাইতে উঠলেন। সংস্কৃত একটা শ্লোক। হয়তো উপনিষদের। মাইনে অবিশ্যি পঞ্চাশ টাকা। ধার, পাচ হাজার পেরিয়ে গেছে। দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়ার পর খুকিকে ঘুম পাড়িয়ে বাবার কোঠায় গিয়ে বসলাম। সদর রাস্তার দিকের দরজাটা বাবা বন্ধ করে ইস্কুলে চলে গেছেন, খুলে দিলাম দরজাটা। নিবিড় কৃষ্ণচুড়া গাছটা দাঁড়িয়ে—এখনো ইতস্তত কিছু ফুল ফুটে আছে। একটা টুল নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে বসলাম। পায়ের শব্দ শুনেই তাকিয়ে দেখি মা পান চিবুতে-চিবুতে এসে দাঁড়িয়েছেন। —'খাওয়া হয়ে গেল ?’ —‘হ্যা।’ —‘কী দিয়ে খেলে আজ ? এ প্রশ্নের উত্তর মা কোনোদিনই দেন না, আজও নিরুত্তর হয়েই দাড়িয়েছিলেন। বললাম—বসো।’ —না, ঢের কাজ আছে।’ —‘কোনো সময়ই তো তুমি বসতে চাও না।’ কোনো জবাব দিলেন না। —“তোমাকে কখন আমি পাই বলো তো?” এ প্রশ্নেরও কোনো উত্তর নেই। —সকালবেলা ঘুমের থেকে উঠে দেখি তুমি রান্নাঘরে চলে গেছ। কত সকালে যে যাও তাও ঠিক বুঝে উঠতে পারি না।’ —না-গিয়ে উপায় কোথায় ?” —শুধু সেইজন্যই না, আমার মনে হয় যেতে তোমার ভালো লাগে, —তাই তোমার মনে হয় বটে। —তাই না মা ? উকিলের যেমন কোর্টে যেতে ভালো লাগে, ডাক্তারের যেমন হ্যাট-কোট পরে স্টেথিস্কোপ নিয়ে বেরিয়ে পড়তে খুব উৎসাহ, দালাল যেমন নাকেমুখে গুজে ছাতি নিয়ে ছুটতে ভালোবাসে, হেঁসেল হয়েছে তোমার তাই।’ নীরব ছিলেন। —‘এই বৃষ্টির ভোরে বিছানায় একটু শুয়ে থাকতে কত ভালো লাগে মানুষের। তুমি সব অগ্রাহ্য করে অন্ধকার থাকতে একটা গামছা মাথায় ফেলে বৃষ্টি ভেঙে রান্না করে দাও ছুট। —চুনে দেখছি জিব পুড়ে গেছে।’ 이 이