পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—“কিংবা লিখছে। -ੱਠੇਠਿ ? —‘চিঠিই লিখছে বোধ করি। —‘কাকে ?” —তা তো আমি জিজ্ঞেস করি নি।’ —‘জিজ্ঞেস করলে, বলে কি সব সময় ? —‘কেনই-বা বলবে? আমরা কেউ-বা কাকে জীবনের মপ কথাটুকু বলি? হাসতে লাগলাম। মা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন। বললেন, যাই।’ —‘দাঁড়িয়ে-দাড়িয়েই তো রইলে এতক্ষণ, বসলেও না।’ —যাই, একটু ঘুমেই গিয়ে। —যুমোবে না তুমি নিশ্চয়ই। —‘কী করব তা বলে ?’ —‘ঘুমোলেও আধঘণ্টার বেশি নয়। —‘কেন ? তারপর কোথায় যাব ?” —“সে সব তুমি জান, তবে দুপুরে আধঘণ্টা-তিন কোয়ার্টারের বেশি ঘুমোতে দেখি নি কোনোদিন; কোনোদিন একাগ্রভাবে অনেকক্ষণ বই পড়তেও দেখি নি; পাড়ায় কড়ি খেলা বা বিন্তির মজলিশে পনেরো মিনিটের বেশি তুমি টিকতে পার না; সেলাইয়ের কলের ইতিহাস তোমার জীবনে নেই; না আছে নকশি কাথা, মোজা, টুপি বুনবার। —সমস্ত সময়ই রান্নাঘরে থাকি বুঝি?’ —না, তা নয়।’ —তবে ? —মানুষকে আপ্যায়িত করতে, কথাবার্তা বলতে, আসর জমাতে, খুবই পার তুমি কিন্তু— একটু চুপ থেকে—সময়ের অভাবে কিছুই হল না তোমার। মা ঈষৎ প্রসন্ন ও বিমর্ষ মুখে—যার যেমন ভাগ্য। ঈষৎ বিরস ও খানিকটা প্রফুল্লভাবে— ‘অবিশ্যি নিজের ভাগ্যকে দোষ দেই না আমি, বিধাতা আমাকে যা দিয়েছেন’—পরস্পর বিরুদ্ধ কথা কলের মতো আউড়ে গেলেন। এখন সময়বিশেষে বিক্ষোভ ও যাতনা। অন্য সময়ে ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে দিয়ে তৃপ্তি। ভাবলেন নিজের জীবনের জবাবদিহি দেওয়া হয়ে গেছে। —‘হ্যা সময়ের অভাবে কী হল না তোমার ? এই তো তিনমাস ধরে এখানে এসেছি—দিনের ভিতর কতবার তোমাকে চেয়েছি। কিন্তু সব সময় শুনেছি অনেক কাজ, কোনো সময় নেই।’ মা চুপ করে ছিলেন। —বাবাও তোমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে চান; বলতে পারলে ভালো লাগে তার— বাধা দিয়ে মা—এমন মিথ্যা কথা বলো না তুমি। —"মিথ্যা নয়, সত্য কথা।’ —‘চবিবশ ঘণ্টা তিনি নিজের কাজ নিয়ে আছেন।”