পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘না চব্বিশ ঘণ্টা নয়, অনেকটা সময় তার অবসর।' —আমি তো তাকে এই পঞ্চাশ বছর ধরে দেখছি। —ইস্কুল থেকে এসে রাত দশটা-এগারোটা, কোনোদিন বারোটা অব্দি তিনি কথার মানুষ খুঁজতে থাকেন, আলাপ করতে চান, নিজেকে বড্ড একা বোধ করেন। —“বেশ তো, দাবার আড্ডায় গেলেই পারেন।’ —‘বাবা তো ইহজীবনে কোনোদিন তাসও খেলেন নি।’ —‘এ-রকম অদ্ভুত লোককে বাধ্য হয়েই একা থাকতে হয়। —বাঃ বাঃ, তুমি এই রকম কথা বল, তাস-পাশার মজলিশ ছাড়া, মানুষের আনন্দ পাবার অন্য কোনো জায়গাই নেই এই পৃথিবীতে? —“যে লোক বাড়ির থেকে বেরুবে না, সমাজে মিশবে না, আন্তরিক কথাবার্তা বলবার জন্য বন্ধু-বান্ধব কী করে জুটবে তার।’ মা বললেন—অর্থসম্পদ নেই, প্রভুত্বপ্রতিপত্তি নেই, কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ নেই।’ —না, তা নেই।’ —এ-রকম ধরণের বোবালোকের কাছে কে এসে বসবে বলো ?” —না বড় একটা কারু আসবার কথা নয় বটে।’ —মাঝে-মাঝে দু-চারটি ছাত্র এসে টিক-টিক করে। —‘হ্যা তা দেখেছি।’ —‘কচিৎ দু-এক জন মাস্টার আসে। তাও যদি হেডমাস্টার হতেন; তাও তো নন তোমার বাবা ? —‘বাবার জীবনটাকে এ-রকমভাবে পর্যালোচনা করা চলে বটে কিন্তু আমি তার জীবনের অন্যরূপ দেখেছি।’ উদাসীন চোখ তুলে মা আমার দিকে তাকালেন। কয়েক মুহুর্তের জন্য স্থির হয়ে মাথা হেট করে রইলাম, কেমন বেদনা বোধ করছিলাম। —‘কোন অপূর্ব রূপ তোমার চোখে পড়ল? —“তোমার চোখেও পড়েছে নিশ্চয় একদিন, যখন তিনি মরে যাবেন তখন বুঝতে পারবে।’ মা—ছি, এমন কামনা করো তুমি ? জেনো, আমার নোয়া-সিন্দুর একদিন ঘুচে যাবে এই কথা আমাকে শুনিয়ে বলবার প্রবৃত্তি তোমার সংযম মানে না? —‘বাবার জীবনী বা চরিত্রের কথা বিশদভাবে তোমাকে বলতে যাচ্ছি না, তোমাকে বলবার প্রয়োজনও নেই, কিন্তু দেখে না-দেখেও সবই জান তুমি। আজকালকার নানারকম নবীন-তরুণ মানুষদের মধ্যে তিনি এমন একজন সাবেকি লোক, যিনি চলে গেলে আমাদের পরিবারের শাখায়-প্রশাখায় কেউ কোথাও তার স্থান পূর্ণ করতে পারবে না।” —আবার তুমি সেই কথাই বলছ; নোয়া-সিঁদুর নিয়ে তার পায়ে মাথা রেখে আমি মরব।” —‘পায় মাথা রাখবার দরকার নেই—দিনের মধ্যে কয়েকবার অন্তত তার মাথার কাছে এসে বসো।’ brひ