পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভিতর মাথা গুজে দু-জনে ঝিমুতে লাগলাম। গভীর রাতে বিছানায় শুয়ে ঘরের ভিতর বিড়ালছানার শব্দ শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখলাম বাবার ঘরে আলো জুলছে, চুপচাপ বসে আছেন চোখ বুজে। অবাক হয়ে ভাবছিলাম, পৃথিবী সব সময়ই কি বাস্তবিক অন্ধস্রোতে চলে? নিশ্চিত বেদনা, নিস্ফলতা ও মৃত্যুর সমুদ্রই কি জীবনকে ঘিরে রয়েছে? তা নয় হয়তো, অন্তত আবিষ্কারের জায়গা আছে, হয়তো আমারও। হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে গেলাম; এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম তাহলে? কোথাও বিড়ালের ছানা নেই, আলো নেই, কিছু নেই, বাবার স্থূল নকডাকার শব্দ শুনতে পাচ্ছি, চারদিকে অন্ধকার শ্রাবণের বাদল ও বাতাসের বীভৎস আমোদ-টিটকারি এতক্ষণে জমল তা হলে ? আরো দুপুর রাতে, রাত তখন প্রায় দুটো-আড়াইটে হবে, মনে হল, কল্যাণীর ঘরে আলো জুলছে, ধীরে-ধীরে বিছানায় উঠে বসলাম—হা আলোই জুলছে। এত রাতে আলো জালিয়ে কেন ? বরাবরই বাতি নিভিয়ে ঘুমোবার অভ্যাস। মিনিট পনেরো বিছানার উপর বসেছিলাম, দেখলাম আলো নিভছেও না, কাক কোনো সাড়া-শব্দও পাওয়া যাচ্ছে না। কল্যাণী, বা কোনো মানুয, যে ও-ঘবে আছে তাই বোধহয় না। আস্তে-আস্তে খুকিকে শুইয়ে দিয়ে, বাতাস দিয়ে মশারি ফেলে, চটির মধ্যে আস্তে-আস্তে পা ঢুকিয়ে কল্যাণীর ঘরের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম বিছানার এক পাশে, একখানা আনন্দবাজার পত্রিকার উপর লণ্ঠনটা রেখে চুপচাপ বসে আছে। সামনে তিনটে জানলাই খোলা, যতদূর দৃষ্টি যায় কতকগুলো বড়-বড় তাল গাছ, তেঁতুল, হিজল, আম, অশ্বথ, বাশ, ধানখেত, আরো অনেক দূর গ্রামের প্রান্তর ও শ্মশান । আস্তে-আস্তে ঘরে ঢুকতেই কল্যাণী—“তুমি এসেছ, ভালো করেছ।” একটু হেসে বললে—‘ভাবছিলাম, আমি তোমাকে ডাকব। বিছানার এক কিনার দেখিয়ে দিয়ে—“বোসো। একটা টিনের চেয়ার ছিল, সেইটে টেনেই বসলাম। —‘কেন, বিছানায় বসতে দোয কী? আলো দেখে চলে এসেছ ? না ? —‘হ্যা।’ —আমিও তাই আন্দাজ করেছিলাম, তা হলে তো ঘুমোও নি। —খুমিয়েছিলাম। —তবে কিছুক্ষণ হল জেগেছ। কেন জাগলে? রাত এখন কটা? —‘আড়াইটা।’ —‘এই সময়ে জেগে উঠলে, কী মনে করে ? —‘এমনি, হয়তো মশার কামড় খেয়ে ঘুম ভেঙে গেল।’ —মশারি ফেলে শোও নি বুঝি ? —না, এইমাত্র ফেলে দিয়ে এলাম।” —খুকি ঘুমুচ্ছে?’ —‘হ্যা।’ مناسb