পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘বেচারা! আমাকে যে ও পেয়েছে, বোঝা হল না। মনে করো, মাতৃহীন হয়েই পৃথিবীতে এসেছে।’ —‘অনেক শিশুই তো আসে। তা নিয়ে এত চোখ ছলছল করবার দরকার কী ? —‘চোখ ছলছল করছে বুঝি আমার ? আঁচলের খুঁটে চোখ মুছে নিয়ে কল্যাণী—“তুমি না এলে তোমাকে কিন্তু আমি ডাকতে পারতাম না।’ —“তা আমি জানি।’ —সত্যি জানো নাকি? আমার মান-অপমানবোধ বাস্তবিৎ কিন্তু খুব বেশি। আঁচলের খুঁটে আবার চোখ মুছে—তুমি আমাকে অপমান কর নি বটে, কিন্তু এতরাতে তোমার ঘরে গিয়ে তোমাকে ডাকব—জীবনের মধ্যে আমার না আছে সেই প্রীতি, না আছে তেমন আবেগ।’ ایچ۔ একটু চুপ থেকে—"বাস্তবিক, তোমার স্ত্রী হয়ে এসে তোমাকে বড্ড লাঞ্ছনা দিলাম। আমার দিকে তাকিয়ে—নিজের জীবনের কথা ভেবে দেখ যদি তুমি, তাহলে হয়তো উপলব্ধি করতে পারবে যে লোকসান আমার বেশি হলেও শূন্যতা যেন তোমার বেশি—কারণ সঞ্চয় বলে কোনোদিনই কিছু যেন পাও নি – পকেটের থেকে একটা সিগারেট বের করে—‘জালাব ? —‘হ্যা, জ্বালাতে পারো। —“দেশলাই কোথায়?” —আমার বালিশের নীচেই আছে—দিচ্ছি।’ দেশলাই হাতে নিয়ে বললাম—‘এত রাতে বাতি জ্বালালে যে?? —‘ঘুম আসছিল না।’ —‘কেন, কী হয়েছে ? —না, হয় নি বিশেষ কিছু। —‘আজ ভাত খেয়েছিলে ?’ —‘হ্যা।’ —‘কী দিয়ে ?” —“তোমরা যা দিয়ে খেয়েছ।’ —দু-এক-দিনের মধ্যে আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি যাতে মনে আঘাত লাগতে পারে? এমন কিছু বলেছি বা করেছি বলে মনে তো পড়ছে না, কিন্তু অজ্ঞাতসারে যদি কিছু বেদনা দিয়ে থাকি— —না, তুমি তো কোনো বেদনা দাও নি আমাকে, কিছু বলো নি; তিন-চার দিন ধরে আমাদের মধ্যে কথাই তো হয় নি।’ —‘তিন-চার দিন কথা হয় নি ? কেন, কল্যাণী ? —‘এই বর্ষা-বাদলের মধ্যে মাঝে-মাঝে এই রকমই হয়; শুয়ে, ঘুমিয়ে, নিজেদের ভাবে থেকে দিনের পর দিন এমনি ভাবেই কেটে যায়।’ সিগারেটটা পকেটে রেখে দিলাম। কল্যাণী—“তা ছাড়া আমার রুচি বুদ্ধিকে খুব শ্রদ্ধা করো তুমি ? একটু হেসে—‘কী রকম? —তুমি জান, মাঝে-মাঝে আমি চিঠি লিখে ডায়েরি লিখে নিজেকে নিয়ে একটু থাকতে চাই; এ-সময়ে আমার কাছে কেউ আসে তা আমার ভালো লাগে না, এ ۹ می