পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তর্ক আর বহুদূর চালিয়ে লাভ নেই; এই গয়নার বাক্স সম্পর্কে পরাজয় মানবার ইচ্ছা এই নারীটির নেই। . . . বললাম—‘গয়না বেছে টাকাকড়ি নাই-বা সঙ্গে নিলে, এমনিই যেও।’ —শুধু হাতে ? —‘হ্যা।’ —‘কত সময়-অসময় নির্মলের কত খরচ দরকার হবে; আমি একটা পয়সাও দিতে পারব না ?” —“তোমার বাবা যে তোমার জন্য কিছু রেখে যেতে পারেন নি সবাই তো তা জানে; তোমার শ্বশুরবাড়িরও কোনো সম্বল নেই।’ —“কিন্তু তাই বলে দুটো বেদানা কেনার জন্যও পরের মুখের দিকে চেয়ে থাকা।’ —'কুড়ি-পচিশ না হয় আমি জোগাড় করে দেব। কল্যাণী—যক্ষ্মারোগীর কেউ কাছে আসে না। হেমন্তবাবুরা হয়তো সেবা করেকরে হয়রান হয়ে গেছেন, এখন সমস্ত সেবার ভার হয়তো পড়বে আমার ওপর। —‘হ্যা, টাকাকড়ি না থাকাতে যা পারলে না, সেবা দিয়ে তাই শুধরে দেবে। ಜಿಣ್ಣೇ ಘ56, ತಕರಾರು I’ কল্যাণী অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর ধীরে-ধীরে বললে—কিন্তু আমি তো আজ একা নই। সংসারের পাকে জড়িয়ে গেছি যে। আমার দায়িত্ব আজ অনেক দিক দিয়ে। সংসারের বধু আমি। আমি মা। কোনো একটা রোগ যদি বাধিয়ে আসি তা হলে খুকির কী হবে ? তোমাদের এই সংসারের শান্তিও যাবে একেবারে নষ্ট হয়ে। ছেলেবেলার স্বপ্ন, খেলা, স্নেহ, ভালোবাসা অবিশ্যি খুব ভালো জিনিশ, কিন্তু সজ্ঞানে হোক, অন্ধভাবে হোক জীবনের পথে আমি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছি যে শুধু আমার হৃদয়ের বিলাসের জন্য এতগুলো লোকের অনিষ্ট করা অন্যায় হয়। একটু চুপ থেকে—হরিচরণের কাণ্ড দেখেছ? —‘কেন ? কী করে ? কই দেখি নি তো।” —‘কপালে চোখ থাকলে তো দেখবে ? গাছের সমস্ত পেয়ারা ছিড়ে খেয়ে ফেলেছে। নিস্তব্ধ ছিলাম। —‘পেয়ারা চিবুতে ইচ্ছা করে না অনেক সময় মানুষের ? কই? ওর কল্যাণে বাকি আছে কি কিছু? —‘পেয়ারা গাছ তো তিন-চারটে। —‘একটা গাছেও একটা কড়াও যদি থাকে। না পাওয়া যায় খাবার সময় একটা লেবু হাতড়ে ? একটা জাহাবাজ চোর।’ —‘লেবু হয়তো কাকার জন্য নিয়ে যায়।’ —‘বাবাকে বলে দাও না কেন তুমি ? —‘কী বলে দেব ?’ —‘এই সব অনাচারের কথা।' —তাহলে মেদিনীপুরে তুমি আর যাবে না? —“উহু। সেদিন দেখলাম খুকুর দুধ চুমুক দিয়ে খাচ্ছে।’ —"কে ?” ॐ ९