পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘হরিচরণ, আর-কে ? রাতেরবেলা আবার ডিবে ভরে-ভরে কেরোসিন নিয়ে পালায়।’ মেদিনীপুরের পাড়াগায়ে যক্ষ্মা রুগির সন্ধানে সে গেল না আর। পানের বাটার কাছে বসে ধীরে-ধীরে আট-দশটা পান তৈরি করল, চিবুল—ডিবের মধ্যে ভরে নিল। তারপর ভালো করে সিথিপাটি করে টকটকে লাল পাড়ের একটা সুন্দর ধোপদুরস্ত শাড়ি বের করে সেজেগুজে পাড়ায় বিন্তি খেলাতে চলে গেল। হয়তো বনলতাও আজ এই রকম। দুপুরবেলা প্রায় আড়াইটের সময় মা ঘরে শুতে এলেন। আমি—‘ঘুমোবে না কি?’ —‘হ্যা, একটু জিরিয়ে নেই। —“তোমার খাওয়া-দাওয়া কখন শেষ হল ?’ + খাটে বিছানো মাদুরের উপর শুয়ে পড়ে—‘এই প্রায় আধঘণ্টা আগে। —আজ একটু তাড়াতাড়ি খেয়েছ তা হলে ? বিনা বালিশে শুয়ে পড়লে যে?’ —বলিশটার তুলো বেরিয়ে গেছে।’ —“আমার বালিশটা এনে দেই?’ —‘কেন এই তো তোশকে মাথা দিয়ে শুয়েছি।” বলে, মাথা তুলে ভাজ করা তোশকের উপর রাখলেন। —দক্ষিণের ঘরে আজ যে কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না।’ —‘ওরা ঘুমিয়েছে সব।' একটু হেসে—তাই আমি ভাবছিলাম। —‘কী ভাবছিলে হেম?” —ভাবছিলাম বৃষ্টি পেয়ে বেশ আরামে ঘুমুচ্ছে—মা-র আজ আর কথাবার্তা বলবার লোক নেই।’ —‘একটা বাংলা গল্পের বই দিতে পারো হেম?” —‘নেই কিছু।" —তা হলে ঘুমনো যাক। —আমি ভাবছি দু-চার দিনের মধ্যে কলকাতায় যাব।' —তা, গেলেই পারো।’ —টাকা জোগাড় করেছেন বাবা, কিন্তু গিয়ে কী করব সে বুঝে উঠতে পারি না, এই ছ-সাত বছর যত চেষ্টা করেছি তাতে মানুষ লাটসাহেব হয়ে যায়, আমি হয়ে গেছি পোড়াকাঠ। এখন কলকাতায় মানে একটা থাইসিস-টাইসিস কিছু তৈরি করে বাড়ি ফিরে আসা। মা চুপ করে ছিলেন। —যদি যক্ষ্মা নিয়ে আসি তাহলে তোমরা কী করবে ? —উঠোনের এককোণে একটা আটচালা তুলে দেবেন তোমার বাবা, সেইখানে তোমার বউকে নিয়ে থাকবে।’ —যক্ষ্মা হলে ?’ —‘হ্যা; আমরা জোগার ওষুধ পথ্য আর বউমার কাছ থেকে দিন-রাত সেবা পাবে। না—সেটুকু ভরসাও তার কাছ থেকে নেই।’ ৯৩