পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘কটা অবিদ ?” — সে প্রায় রাত বারোটা।’ —“সেই এক পেয়ালায়ই হয়তো পর-পর পাঁচশ জন খেল ?’ — প্রায় সেই রকমই হয়; তবে পেয়ালা ধুয়ে নেয়।’ — ধুয়ে নিলেও তো আমার খেতে প্রবৃত্তি হয় না; আর কেমন করেই-বা ধোয়—দায়সারা গোছের নিশ্চয়ই? তা ছাড়া আবার কী ? ছি, খেতে ঘেন্না করে না তোমার ?’ —‘এক কাপ চা সামনে রেখে ভাবি, কলকাতায় এসে এবার আর প্রবঞ্চিত হয়ে ফিরে যাব না, জীবন এবার পুরস্কার পাবেই মনে ধীরে-ধীরে আরো উৎসাহের সঞ্চার হয়। খানিকটা বল পাই।’ पी.... - —মনে মনে নানা রকম ছক কাটি, কী করব না-করব গতিবিধি ঠিক করি। চায়ের দোকানে অনেক ক্ষণ বসে থাকি।” સ્વી.... —“কিন্তু পথে নেমেই কী রকম শূন্যতা, কোনো উপায় দেখি না যেন। চার দিকে সাজানো-গোছানো দালান-দোকান, সাইন বোর্ড, প্রতিষ্ঠিত জীবনের পরিচয় দেয়। ট্রামে-বাসে মানুষের দল তাদের জীবনের সঙ্কল্প ও কষ্টের কথা প্রচার করে চলে—বড়বড় আপিস-আদালত কলেজ-স্কুল ইনস্টিটিউশানগুলো। জীবনের ব্যস্ত মোহাসক্ত মৌমাছির নির্বিবাদ নিরপরাধ গুঞ্জন; অপরূপ। গ্রামোফোনের দোকান থেকে গান ও টাকার ঝনঝনানি জড়িয়ে মিশিয়ে কানে এসে লাগে। বুঝতে পারি না জীবনের প্রয়োজনে কোনো আওয়াজটার রূপ ও সফলতা বেশি, এগিয়ে যাই—রেডিও তার কাজ করে চলেছে; কাগজওয়ালা সব কাগজ বিক্রি করে ফেলেছে, এখন নাগরাই পায় দিয়ে বাড়ি চলে গেলে পারে, কিংবা সাইকেল চড়ে আরো একগাদা কাগজ নিয়ে আসবে; পানওয়ালির ভিজে চুল সিথায় সিন্দুর, অফিসের বাবুদের পান জোগাতে গিয়ে হাপিয়ে উঠছে সে। বইয়ের দোকানে বিস্তর ভিড় হয় তো—কলেজে সেশান আরম্ভ হল। হু-হু করে নোট কাটছে; কাটা কাপড়ের দোকানে মৌতাত লেগে গেছে, হয়তো সেলের বিজ্ঞাপন। থিয়েটারে তিনটের সময় থেকেই ম্যাটিনি আরম্ভ হবে, একটা হ্যান্ডবিল হাতে এসে পড়ে, একটা নতুন ব্র্যান্ডের সিগারেটের বড় পোস্টার নিয়ে গাধার টুপি ও সঙের পোশাক এটে সারি-সারি কতকগুলো লোক নিঃশব্দে হেঁটে যায়। বালিগঞ্জের দিক থেকে একটি প্রসন্ন প্রদীপ্ত পরিবার অসংখ্য সুটকেসট্রাঙ্ক ইত্যাদি নিয়ে শিয়ালদার দিকে ছুটছে। হয়তো দার্জিলিঙে যাবে। খানিকটা বৃষ্টি হয়ে গেল, একটা শেড খুঁজে বার করতে-করতে ঢের ভিজে গেলাম। ভিজে ফুটপথে হাটতে-হাঁটতে একজন রোগীর ছিটনো থুথু আর-একটু হলেই গায় লাগছিল, একটা দোকানের মস্তবড় পাপোশ আমার মুখের সামনে ঝেড়ে নিল। একটা মহিষের লেজের বাড়ি খেলাম। রেলিং-ঘেরা এক বারান্দায় এক অনিন্দ সুন্দর খুকি দাড়িয়ে আছে, সেই একটি অনিন্দ সুন্দর খুকির মুখ অনেকক্ষণ মনকে আকর্ষণ করে রাখে। নিরর্থক কাছে এসে পড়েছি। এগিয়ে চলি, কয়েকটা কাক দেবদারু গাছের ভিজে শাখার দিকে উড়ে গেল। খুপরির মতো স্টলে বসে লুঙ্গিওয়ালা মুসলমান ছোকরারা নিদারুণভাবে Տ Գ