পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কলরবে এক-একটা সন্ধ্যা বড় চমৎকার কেটে যায় আমার।’ પીં.... —“কিন্তু তবুও আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করে।’ —*কার ? তোমার ? কেন ?" —‘চৌকাঠের সঙ্গে দড়ি ঝুলিয়ে কিংবা বিষ খেয়ে যে মরণ, সে রকম মৃত্যু নয় আউটরাম ঘাটে বেড়াতে গিয়ে সন্ধ্যার সোনালি মেঘের ভিতর অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছে করে; মনে হয় আর যেন পৃথিবীতে ফিরে না আসি। —‘ও, এই রকম? কিন্তু এ তো কোনো সম্ভবপর কিছু কথা নয়। আউটরাম ঘাট কোথায় ?” —‘গঙ্গার একটা ঘাট!" — কোনদিকে বলো তো?” —“তুমি দেখো নি।’ — ঢের জাহাজ দেখা যায় বুঝি সেখান থেকে? — তা যায়।’ — রেঙ্গুনে যে-জাহাজগুলো যায় তা দেখেছ? — দেখেছি।’ —“আমি একবার দেখেছিলাম—সে। অতবড় জাহাজ মানুষ বানায় কী করে ? —‘গৈরিক পরে সন্ন্যাসী হয়ে বেরিয়ে গেলে কেমন হয় মা ? — কেন ? সন্ন্যাসী হবার ইচ্ছা কেন ? —“কিংবা, খুন করে জেলে গেলে ?’ —‘স্ত্রী-সন্তান আছে, মিছিমিছি জেলে গিয়ে কী লাভ ?’ — জেলের বাইরে থেকেই-বা কী করতে পারি? — বাইরে থেকে চেষ্টা তো করতে পারবে।’ মাথা নেড়ে—"হ্যুদয়ে যদি বিশ্বাস থাকত, তাহলে অনেক আগেই জেলে চলে যেতাম।” — কী সে বিশ্বাস ?” —‘যে-বিশ্বাসে মানুষ জেলে যায়। সংসার ছেড়ে উদাসীন হয়ে ঘুরে বেড়াতেও ঢের বিশ্বাস লাগে, তাও নেই।’ —“তোমার রকম-সকম দেখে মনে হয় সংসারেও কোনো বিশ্বাস নেই তোমার।' —“তা বরং খানিকটা আছে।’ —‘কই? কোনো নজির তো পাই না।’ —“দেখো না, বিয়ে করেছি, আজকালকার দিনে কোনো বিষয়াসক্ত লোকও বিয়ে করতে চায় না, কিন্তু আমার সংসারাসক্তি তাদের চেয়েও যে কত গভীর, কল্যাণীকে এখানে এনে যে ক্ষয় করছি তাই কি তার প্রমাণ নয় ?” —‘এত তো বোঝ তবু অকৰ্মণ্য থাক কেন ? —তারপর দেখ, একটি সন্তানেরও জন্ম দিয়েছি। পৃথিবীতে এসে সংসারকে পুজো করবার লোলুপতাই তো অত্যন্ত বীভৎসভাবে দেখালাম। —‘এখন থেকে শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজা করো। —‘চেষ্টা করছি। অন্তত সন্তানসৃষ্টি করব না আর। ৯৯