পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হাতে চূর্ণ নগরগুলোকে, মানুষের হাতে নিহত মানুষরাশিকে ঠাট্টা করছে। আকাশে ফিঙে উড়ছে, হরিয়ালেরা চলেছে চোখে ঠোটে জলের গন্ধ নিয়ে কোনো নিকটতম জলের মহানুভব শান্তির দিকে, যদি না, মানুষের গুলি-গুলতি এসে কাউকে-কাউকে উপড়ে অন্ধকারের দিকে ফেলে দেয় । মাথার উপরের সূর্যের দিকে তাকায় নি নিশীথ কিন্তু দিঘির পাড়ের খই রঙের হাসটা চোখ পাজলে দেখে নিচ্ছে সূর্যকে ; অপরূপ নারীকামিতার মতো যেন ; মস্ত বড় শিমূল গাছের থই থই পাতার ভিতর কতগুলো স্নিগ্ধ নিঃশব্দ কবুতর বসে আছে, হঠাৎ ধপধপে শাদা একটা কবুতর উড়ে গেল। পাখিটার ডানার আলোর ঝিলিক নিশীথের চোখে এসে লাগল—টের পেল সে, মহত্তর সূর্য কোথাও অদৃশ্ব থেকে সেবা করে যাচ্ছে, সুধা দিচ্ছে, অমেয়, শালীন আলোক দান করে চলেছে । ‘তুমি কোথেকে এলে ? —হাসি মুখে বললে অৰ্চিত । ‘কলুবাবুর কাছে গিয়েছিলাম।

  • ८कन ?'

‘রানুর কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম— *আর নরেনের ? অচিত বিরক্ত হয়ে বললে, এক্ষুনি জিজ্ঞেস করতে গেলে কেন ?" ‘কেন কী হয়েছে ? তুমি না বললে খুব ভালমানুষ কালুবাবু— অৰ্চিত ভ্রুকুটি করে হেসে ' বললে, ‘তোমার চেয়ে ভালমানুষ তল্লাটে নেই । আচ্ছা যাও, যা-হবার হয়েছে—আমাকে গিয়ে ঠিক করে দিতে হবে । কিছু জানতে পারলে রানুর কথা ?

  • না ।” গোরু, তবে যে সব গাইগোরুর মুখ হরিণীর মত, অৰ্চিত অনেকটা সেই রকম । তাকিয়ে দেখছিল নিশীথ, একটা হরিণী সেমিজ পরে মহিষের শরীরের ভিতর দিয়ে, দেওয়ালের ভিতর দিয়ে, অদৃশ্য হয়ে গেল যেন কোথায় । না, অদৃশ্ব হয়নি তো, ঐ তো দাড়িয়ে আছে ; হরিণীর শরীরের ভিতর দিয়ে ছল-ছল করে উঠছে জল, নদীর, রাত্রির, যেখানে সূর্য নেই, শুদ্ধ দেশের রাত্রির জল ছল-ছল করে উঠছে—তারার ফঁাকে-ফণকে যে-অন্ধকার আছে সেগুলোকে জলোচ্ছাসিত করে—কত শত তারার শরীর, কত শত

৯২