পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘মাঝে-মাঝে হিতেন এসে বলে ; এই কলেজের ফোর্থ ইয়ারের হিতেন । তোমার বাবার খুব ভক্ত । আমাদের ভালটা দেখে, ভাল করে, ভাল চায়, হিতেন, তা ট্যাক্সি চালালে ঐ রকমই নাকি, হরীত ? হ্যা, প্রফেসারির থেকে ঢের বেশি পাওয়া যায় । হরিলালের মুখনাড়া খেতে হয় না—’ ‘কি ছেলে, হবে নাকি তুমি ট্যাক্সি ড্রাইভার ? না গভর্নমেণ্টের বড় চাকরি করবে ? দেশ তো স্বাধীন । তোমার বাবণকে রেহাই দেবে কে ?’ হারীত দেয়ালে ঠেস দিয়ে জানলার ভিতর দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়েছিল । একটা সাদা বেড়াল চলে গেল ; সজনে গাছে, আমলকী গাছে বেশ দেখাচ্ছে বাইরের জ্যোৎস্না ; আমলকীর ডালে সাদা বেড়ালটা যেন বসে আছে, না ওটা তো চাদ ; বেশ ভারী, খুব বড, ওটার চাপ বোধ করতে পারা ষায় যেন, সাদা স্নিগ্ধ ওর রোয়ার হৃদয়ে চোখ বুজে ঘষে সাদা কাবলি বেড়ালের অনাদি প্রতীকের মা ওর উজ্জ্বল সত্তকে বেশ ভাল লাগে । ‘আমাদের কলকাতায় নিয়ে যাবে কবে ? হগরীত ? মার কথার কোনো জবাব দিচ্ছিল না, হারতের মুখে এ-সবের কোনো উত্তর জোগচ্ছিল না । বাব কে রেহাই দেবে, মা-দের কলকাতায় নিয়ে যাবে, এ-জন্য তো তার জীবন নয় । তার মা-বাবার চেয়েও ঢের হয়রান লোক আছে পৃথিবীতে । ব্যক্তিবিশেষকে নিস্তার দিতে হলে সেই সব ব্যক্তিদেরই প্রথম সুবিধা করে দিতে হয় । তার মার চেয়ে তাদের কি বেশি ভালবাসে সে ? ভাল সে কাউকেই বড় একটা বাসে না, মানুষের কষ্ট দেখেও প্রায়ই সে বিচলিত হয় না, তবে ছোটদের উপর বড়-বড় ধিঙ্গি লোকদের অত্যাচার সে হজম করতে পারে না । বেণকা দুর্বল মানুষ কষ্ট পাচ্ছে বলে ততটা নয়, কিন্তু কেবলি টাকাকড়ি, ভুয়ো প্রসার-প্রতিপত্তি, কতকগুলো লোককে লুটতরাজে মাতিয়ে রাখছে অন্যদের থে তলে ফেলে—এ-সব সে সহ্য করতে পারে না । পৃথিবীতে ভাল রক্ত আসুক—দরকার হলে খুব কঠিনভাবে নিকেশ করে দিয়ে যা খারাপ আছে তাকে । আসুক ভাল তেজ, সহনশীলতা, আলো । ‘বলি, তোমার বাবণকে রেহাই দেবে না ? ‘র্তার নিজেরই হাত-পা আগছে— ‘তা তো আগছে । তা দিয়ে জলপাইহণটির কলেজ করা হল আগাদিন । এখন ১২৩