পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তা হলে অণর কোনো গলদ থাকবে না । ব্রাণ্ডেনবুর্গের হের ব্রকমানের সাদা ঘুড়ির মত হাওয়া-ঝড় পিটয়ে ছুটে বেড়াতে পারবে নমিত । ব্রাণ্ডেনবুর্গের হের ব্রকমানের ঘুড়ির কথাটা অবশ্য নিতান্তই ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতার ব্যাপার, ডাক্তারের জার্মানি বাসকালের জীবনের । কী সে ব্যাপারটা রোজেনবুর্গকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছে নমিতা, মাথায় নানা রকম তাগিদ ছিল তার । রোজেনবুর্গ ওষুধের খুব ভক্ত নয়, বীর বার বলেছে নমিতাকে, ওষুধ বেশি কিছু ব্যবহার করতে নিষেধ করে দিয়েছে, একেবারেই কোনো ওষুধ দিত না, জল বাতাস-রোদ প্রকৃতির হাতে ছেড়ে দিত। তবে মুশকিল, কলকাতা সমুদ্রের পারে নয়, চমৎকার খোলা সৈকত নেই এখানে ; নিসর্গের নিজের বর্ণও নেই, কলকাতার জলবণতাস ভিজে বি শ্ৰী বিষাক্ত, এখানে ও-রকম চিকিৎসা চালানো কঠিন ; এখানে নুডিস্টদের মত খোলা খালি শরীর নিয়ে, রোদে নদীতে হাওয়ার ভিতর ফিরে বেড়ানোর তেমন কোনো মনে হয় না । ত। যদি হত, নমিতাকে তা হলে প্রকৃতির সব পবিত্র উপাদানগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে ঘুরে বেড়াতে বলত রোজেনবুর্গ। কথাটা বেশ মনে ধরেছিল নমিতার । কলকাত। যদি নীল সমুদ্রের পারে রৌদ্রালোকিত প্রদেশ হত, ঝাউ শাল পিয়াল পিয়াশাল সিসু পাইন পপলারের বন উপবন থাকত যদি সে সমুদ্রের এপাশে-ওপাশে, এ বলয়ে কাছে-দূরে, বলয়পরাৎপরে, তা হলে সে গাছের বীথির ভিতরে, রোদে, ছায়াগুচ্ছের দেশে, খোলা সৈকতের অফুরন্ত সূর্যে—কোথায় কে আছে, না-আছে উপেক্ষা করে ঘুরে বেড়াত—সুস্থ সম্পূর্ণাঙ্গ মেয়েশরীর নিয়ে—সমস্ত জামাকাপড়ের আবরণের ভিতর থেকে নিজেকে খুলে ফেলে । রোজেনবুর্গ এ-রকম একটা আশ্চর্য উজ্জ্বল আকুতি ফলিয়ে দিয়ে গিয়েছিল তার রক্তের ভিতর ; রাত সাড়ে দশটার সময় চলে গেল ডাক্তার । তারপর জুলফিকারদের ওখানে গিয়েছিল সে । একটার সময় পাট শেষ করে মোটর নিয়ে এক-একা একটু ঘুরপথে ফিরেছে । বাড়িতে ফিরবার ইচ্ছা ছিল কি তার ? সংকল্প, স্বপ্ন, প্রাণে নিয়ে গিয়েছিল কি সে পার্কসার্কাসের ফ্ল্যাটে রণত কাটাবার ? মাথা ধরেছে, ঘুম আসবার কথা নয়, যদি না ঘুমের ওষুধটা খাওয়া যায় । ঘুম নেই শরীরে, নিজের ঘরের ভিতর ঢুকে, জুতো খুলে, ফ্যান চালিয়ে দিয়ে বিছানার উপর লাফ দিয়ে পড়ে দু ଧା ୩୩ ১২